Sunday, December 26, 2021
#ক্ষমতায়_এলে_একদিনেই_মাদ্রাসা_খুলে_দেব,#সেই_ভোট_বেপারীরা_আজ_কোথায়?বিগত বিধানসভা নির্বাচনে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় ভোট বৈতরণী পার হওয়ার জন্য প্রধান হাতিয়ার ছিল - "ক্ষমতায় এলে একদিনেই মাদ্রাসা সমূহ খুলে দেব। " ক্ষমতা অর্থাৎ সরকার গঠণ করতে না পারলেও প্রতিপক্ষকে সরকার গঠণ করতে পরোক্ষভাবে যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকার প্রাদেশীকিকৃত মাদ্রাসা সমূহকে Repealing Bill 2020 এনে সাধারণ স্কুলে রূপান্তরিত করেছে। আসাম বিধানসভায় সেই ভোট বেপারীরা সরকার পক্ষের আনা বিলের বিপক্ষে যথোচিত সবিস্তারে যুক্তিসমূহ খণ্ডনে ছিলেন অপারগ। তাই সরকার পক্ষ যা চেয়েছে তা করতে সক্ষম হয়েছে। উল্লেখ্য, বিগত শতাব্দীতে আসামে সরকারি মাদ্রাসা সমূহের অবদান কৌমী মাদ্রাসা সমূহ থেকে মোটেও কম নয়, অনেকাংশে বেশিই। আসাম তথা গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চলে, দেশের আনাচে কানাচে ও বহির্বিশ্বে অগ্রগণ্য। বিশেষ করে #বদরপুর_আল_জামিয়ার পড়ুয়ারা সর্ব বিষয়ে পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। কিন্তু হায়😰 আজ বদরপুরের আল-জামিয়া কী তার হৃত গৌরব ও ঐতিহ্য ফিরিয়ে পাবে!!! ভোট বেপারীরা #সংসদে সেই ইস্যু নিয়ে ঝড় তুলতে পারতেন। তা তো কখনও করতে দেখিনি। নিশ্চয়ই এতে বুঝতে অসুবিধা নেই যে, সেই ভোট বেপারীরা সরকারি মাদ্রাসা সমূহকে সুরক্ষা দিতে আন্তরিক নন। ভোট বেপারীরা কান খুলে শুনে রাখুন #জাতি_কখনও_ক্ষমা_করবে_না।
Sunday, November 21, 2021
মাওলানা মোহাম্মদ তাহির (রহঃ)ভূতপূর্ব সভাপতি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য জমিয়ত এবং আমীরে শরীয়ত। ✍ মুফতি মুহাম্মদ রমজান------------------------------------------------------------------👉 প্রথম কিস্তিঃ-বাংলাভাষী আলেমদের মধ্যে দেশজোড়া খ্যাতি অর্জন করা কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যে মাওলানা মুহাম্মদ তাহির অন্যতম। তিনি 15 ই মে, 1922 খ্রিস্টাব্দে অসম রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলার সিঙ্গারিয়া নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মায়ের নাম ছিল নাসিমা খাতুন। যিনি ওই গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের ধর্মপরায়ণ মহিলা ছিলেন। তাঁর পিতার নাম ছিল মাওলানা হাজী হাজিম। যিনি সিঙ্গারিয়া গ্রামের খ্যাতনামা বনেদি বংশের একজন সুদক্ষ আলিম ও শিক্ষাবিদ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। মাওলানা হাজিম সাহেব প্রথম স্ত্রী বিয়োগের পর নাসিমা খাতুনকে দ্বিতীয় স্ত্রী রূপে গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, নাসিমা খাতুনের প্রথমে সালেপুর গ্রামে বিবাহ হয়। সেখানে ইমদাদুর রহমান ও হাতিম বিবি নামে দুই সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। পিতা-মাতা উভয়পক্ষেরই দ্বিতীয় বিবাহের পর মাওলানা মোহাম্মদ তাহের নামে এক পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে। মাওলানা হাজিম সাহেবের প্রথম স্ত্রীর গর্ভজাত এক পুত্র মারা গেলে ও দ্বিতীয় পুত্র নিখোঁজ হলে তিনি অতি সাবধানতা ও সতর্কতার সঙ্গে দ্বিতীয় স্ত্রী নাসিমা খাতুনের তত্ত্বাবধানে তাঁদের আদরের দুলাল তাহিরকে অতি যত্নে লালন-পালন করেন। কিন্তু তাঁর ডানপিটে, চঞ্চলতা ও দুরন্তপনা ভাব দেখে বয়স অল্প হওয়া সত্ত্বেও মাওলানা তাঁকে নিজের শাসনে ও অধীনে রাখতে ত্রিপুরার ঝেরঝেরি ইসলামিয়া মাদ্রাসা নিয়ে যেতে বাধ্য হন ।1926 সালে বসন্ত রোগ মহামারী রূপ ধারণ করে, যার ফলে 70 জন লোক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে । মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষরাও ওই মহামারীর শিকার হয়ে পরলোকগমন করেন। তাই তাহিরকে কুর্ত্তি ইসলামিয়া মাদ্রাসায় নিয়ে যেতে বাধ্য হন। সেখানে কঠিন শাসন ও নজরদারিতে রেখে স্বীয় পুত্র তাহিরকে বিদ্যা ও জ্ঞানানুরাগী করে তোলেন । 1936 সালে বদরপুরে এম বি মাদ্রাসার চতুর্থ ক্লাসে ভর্তি হয়ে ষষ্ঠ ক্লাস পর্যন্ত পড়াশোনা করেন । ওই সময়ে তাঁর মেধার বিকাশ দেখে সমস্ত শিক্ষক ও অভিভাবক অসমের সুপ্রসিদ্ধ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান সিলেটে গিয়ে আলিয়াতে অধ্যয়ন করার পরামর্শ দিলে, সবাইকে সাধুবাদ জানিয়ে আলিয়া অভিমুখে যাত্রা করেন। সেখানে অতি কৃতিত্বের সঙ্গে পড়াশোনা করে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে বৃত্তি লাভ করেন । কিন্তু ওখানে পঠন-পাঠনকালে দিবা-নিশি পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ের ফলে হযরত মারাত্মকভাবে কাশি ও শ্বাসকষ্টের দরুন অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই মারাত্মক ব্যাধির কারণে তিনি এমনই অসুস্থ হয়ে পড়লেন যে, প্রায় বাঁচার আশাটুকুও ছিল না । ফলে মাওলানা হাজিম সাহেব দারুণভাবে মর্মাহত হয়ে ভেঙে পড়লেন । ইতিপূর্বে তিনি দুই পুত্রের বিয়োগ-ব্যথায় শোকাহত ছিলেন । আবার এ অমূল্য রতনও প্রায় হাতছাড়ার উপক্রম। কিন্তু তিনি ধৈর্যের চাবিকাঠি হাতছাড়া করলেন না । বরং আল্লাহর দরবারে অঝর নয়নে কেঁদে কাকুতি-মিনতি শুরু করে বললেন, "ওগো আল্লাহ ! তুমি সর্বশক্তিমান । তোমার করুণা ও শক্তির অন্ত নেই । তুমি মৃতকে জীবিত করতে পারো। তুমিই আমার সব। তুমি আমার কলিজার টুকরো, নয়নের মণি তাহিরকে সুস্থ করে দাও। একে তোমারই হাতে সঁপে দিলাম । তাহির সুস্থ হয়ে যেন সারাটি জীবন দ্বীন-ধর্মের বিভিন্ন সেবায় নিয়োজিত থাকতে পারে । তোমার সন্তুষ্টির জন্য আমি একটা দুটো নয়, বরং এক হাজার রোজা রাখব। হে দয়ার সাগর! দয়া করো।"আল্লাহ্ তাঁর আব্বার এই কাকুতি-মিনতি কবুল করলেন। তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেন । এবার মাওলানা হাজিম সাহেব তাঁর অঙ্গীকারবদ্ধ রোজার মধ্যে ছ'মাসের রোজা মসজিদে এতেকাফ সহ এবং বাকিগুলো বাড়ি থেকে আদায় করলেন। আল্লাহর সঙ্গে যে অঙ্গীকার করেছিলেন, তা তিনি পূর্ণভাবে আদায় করলেন। একেই বলে প্রকৃত মুমিন। সত্য বলতে কী! এই কঠিন মান্নত ও সাধনার কথা শ্রবণ করলে নিশ্চয়ই সবাই আঁতকে উঠবে। কিন্তু হযরতের আব্বার মতো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন আলেম ও খোদাভীরুর পক্ষে তা পূরণ করা সম্ভব হয়েছিল ।1944 সালে উচ্চশিক্ষার জন্য হযরত বিখ্যাত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি দারুল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন। সাইখুল ইসলাম সৈয়দ হজরত মাওলানা হুসাইন আহমাদ মাদানী (রহঃ)-র কাছে বিশ্ব শ্রুত ও সর্বজনগৃহীত বুখারী শরীফ অধ্যয়ন করেন। এছাড়া তিনি বিশ্ববরেণ্য দেওবন্দ মাদরাসা সুযোগ্য ও দক্ষ মহাপরিচালক হযরত মাওলানা ক্বারী তৈয়্যৈব (রহঃ), আল-কুরআনের বিখ্যাত ভাষ্যকার হযরত মুফতি শাব্বির আহমদ উসমানী (রহঃ) , আরবি সাহিত্যের মহাপন্ডিত হযরত মাওলানা এজাজ আলী (রহঃ) প্রমুখ পণ্ডিতের সান্নিধ্যে থেকে হাদিস, তফসীর,ফেকাহ ও আরবি সাহিত্যে অগাধ পান্ডিত্য অর্জন করেন। এরপরেও তিনি 1944 সালে দেওবন্দে অধ্যায়নকালে অবসরে কুরআনের ভাষ্যকার অধ্যাপক মাওলানা আহমদ আলী (রহঃ) -এর কাছে অধিক পাণ্ডিত্য অর্জনের জন্য সুদূর লাহোরে পাড়ি দেন। পুনরায় 1945 সালে দেওবন্দে ফিরে এসে হাদীস শাস্ত্রের সনদ লাভ করে সাইখুল ইসলাম (রহঃ)-এর কাছে আধ্যাত্বিক দীক্ষা নেন। 1946 সালে দেওবন্দ থেকে প্রত্যাবর্তন করে হযরত সিলেট উর্দু কলেজে অধ্যাপনার কাজে নিযুক্ত হন । একথা যখন তার পিতা হাজী হাজিম সাহেবের কর্ণগোচর হলো, তখন তিনি কালবিলম্ব না করে সিলেটে গিয়ে হযরতকে ধমক দিয়ে বললেন, "তাহির! আমি তোমাকে উর্দু কলেজের অধ্যাপক বানানোর জন্য এত কষ্ট, এত পরিশ্রম করে দ্বীন-শরীয়তের আলেম করিনি। তোমার অসুস্থতার কারণে যেহেতু তুমি কোর্স সম্পূর্ণ করতে পারনি, তাই পুনরায় দেওবন্দে গিয়ে হাদিস-তাফসিরের কোর্স সম্পূর্ণ করে এসো।"পিতার আদেশ ও নির্দেশে ওই চাকরি ত্যাগ করে পুনরায় দেওবন্দে গিয়ে হাদিস-তফসীরের কোর্স পূর্ণ করে সুনামের সঙ্গে পাশ করে প্রত্যাবর্তন করেন। 1948 সালে বদরপুর টাইটেল মাদ্রাসায় মাত্র 30 টাকা মাসিক বেতনে হযরত অধ্যাপনা শুরু করেন। পরে তাঁর শিক্ষা ও দীক্ষাগুরু হযরত মাদানী সাহেব (রহঃ)-এর সুপরামর্শে ও নির্দেশ 1949 সালে মাসিক 70 টাকা বেতনে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী সুবিখ্যাত আলিয়া মাদ্রাসা অধুনা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে হাদিসশাস্ত্রের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন । দির্ঘ 31 বছর খুব সুনামের সঙ্গে অধ্যাপনার কাজ অব্যাহত রাখেন । পশ্চিম বাংলার বিখ্যাত বহু আলেম তাহির সাহেবের ছাত্র হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। ✍জমিয়তে উলামার মাধ্যমে সমাজিক সেবায় মাওলানা মুহাম্মদ তাহির (রহঃ)-এর অবদান । ✍এর মাঝে হযরত অবস্থা ও সময়ের পরিপেক্ষিতে বিভিন্ন সামাজিক সেবামূলক কর্মকান্ডের জমিয়তে উলামা হিন্দের বড় বড় নেতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা প্রভৃতি রাজ্যের বিপদগ্রস্ত ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান। সল্প সময়ের মধ্যে তিনি বিদ্যা-বুদ্ধির পাণ্ডিত্যের সঙ্গে সঙ্গে মানবতার দিশারী হিসেবে দারুণ খ্যাতি ও যশ লাভ করেন ।1942 খ্রিস্টাব্দে যখন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ এবং কংগ্রেস একযোগে "ভারত ছাড়ো" আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তখন সেই বৃহত্তর আন্দোলনে হযরত যে ভূমিকা পালন করেন, সত্যিই তা প্রশংসার দাবি রাখে ।কেননা, ওই সময় তিনি সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারমিডিয়েট বর্ষের ছাত্র ছিলেন । তা সত্ত্বেও সেই ক্লাস বর্জন করে ছাত্রদের নিয়ে দেশ স্বাধীনের করার লক্ষ্যে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। যার ফলে তিনি ইংরেজ শাসকদের চোখের বালি হয়ে পড়লে তাঁকে কিছুদিন কারাবরণও করতে হয়। এত কিছু হওয়ার পরেও তিনি সেই বর্ষের পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন ।1947 সালের 15 আগস্ট ইংরেজদের গোলামী থেকে ভারত যখন স্বাধীন হল, তখন সমগ্র ভারতব্যাপী মারাত্মক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হল। কলকাতায় তা বীভৎস রূপ ধারণ করে। উত্তর 24 পরগনার বারাসাত থেকে বনগাঁ পর্যন্ত এই দাঙ্গা ছড়িয়ে যায়। চারিদিকে মানুষের আর্তনাদ,হত্যা, লুটতরাজ, মুসলিম-অমুসলিম সব সম্প্রদায়ের মধ্যে হা-হুতাশ । কে দেখে ? কে শোনে? ঠিক সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তে হযরত মাওলানা তাহির (রহঃ) জমিয়তের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামার পরোয়া না করে নিহতদের জানাযার ব্যবস্থাপনা, আহতদের সেবা-শুশ্রূষা ও চিকিৎসা করা, ভীত ও সন্ত্রস্তদের আশ্বস্ত ও অভয় প্রদান করা, তাদের শিবির ও রিলিফের বন্দোবস্ত ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সেই কঠিন মুহূর্তে নিজের পরিবার-পরিজনদের খোঁজ-খবর নেয়ার অবকাশ পাননি । সেই সময় জমিয়তের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন হযরত মাওলানা আস'আদ মাদানী সাহেব তিনি তাহির সাহেবের ডাকে সাড়া দেন। দুই বন্ধু পুরো রমজান মাসে মজলুম মানুষের জন্য ত্রাণ দিয়ে, পাশে থেকে ভরসা দিয়েছেন। একসাথে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন । পবিত্র রমজানে কোথায় সেহরি, কোথায় ইফতারী, তার কোনো খেয়াল নেই । সাহাবা হুজুরদের মত একটা-দুটো খেজুর মুখে দিয়েই অবিরাম-অবিরত রিলিফের কাজের দৌড়ঝাঁপ, ছোটাছুটি করেছেন । অসুস্থ ও ভগ্ন শরীর নিয়ে দেশ, জাতি ও কওমের সেবায় এই আত্মনিয়োগ দেখে তার আত্মীয়-স্বজনরা ভয়ে কাঁপতেন। বাড়িতে তার স্ত্রী বলতেন, তুমি ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ফেলে রিলিফ-ত্রাণ নিয়ে সদা ব্যস্ত, অথচ আমরা নিজেরা তো বিপদগ্রস্ত । নিরাপদে নেই । কখন কি দুর্ঘটনা ঘটে যায়। তখন তিনি শুধু তাদের সান্ত্বনা বাক্য শোনাতেন আর বলতেন, "আল্লাহর উপরে ভরসা করো" তাঁকে স্মরণ করো। তিনিই আমাদের রক্ষা কর্তা!"সেই মুহূর্তে হোস্টেল সুপার তাকে বললেন, "মাওলানা! আপনার বাচ্চাকাচ্চা ও ছেলেমেয়েদের সবাইকে হোস্টেলে নিয়ে আসুন। এখানে ওরা সবাই নিরাপদে থাকবে"। তখন তার প্রত্যুত্তরে হযরত বললেন, "আপনার হোস্টেলে যে আল্লাহ আছেন, আমাদের বাসায় ও সেই আল্লাহ আছেন "। কী দৃঢ় অটুট বিশ্বাস! কত আস্থা আল্লাহর উপরে!1959 সালে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পুনরায় সাম্প্রদায়িকতার বিষ দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়লে ত্রিপুরাতেও এই প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় । অবস্থা বেগতিক দেখে বহু মুসলিম জমি-জায়গা, ঘর-বাড়ি বিনিময় করে মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান তথা নিজ জন্মভূমি, মাতৃভূমি ত্যাগ করে পাকিস্তানে যেতে শুরু করে। এই সময় ফিদায়ে মিল্লাত হজরত মাওলানা আস'আদ মাদানী (রহঃ) , মাওলানা তাহির (রহঃ) ও মাওলানা আব্দুল হক (রহঃ) প্রমুখ ত্রিপুরার অত্যন্ত প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে সভা-সমিতি, মিটিং-মিছিল করে মুসলমানদের সবর ও ধৈর্য ধরে আল্লাহর প্রতি ভরসা করে নিজেদের ভিটে-মাটি তথা জন্মস্থান ও জন্মভূমি আঁকড়ে ধরে থাকতে অনুরোধ জানান । নসিহত করেন, এই সমস্ত বুযুর্গানে দ্বীনদের নসিহত শুনে যারা তাদের অটল সিদ্ধান্ত বাতিল করে পাকিস্তান যাওয়া মুলতবি করেছিল, তারা আজ রাজার হালে বাস না করলেও সুখেই বসবাস করছে । ✍মাওলানা তাহির (রহঃ)-এর সাহসিকতা ✍1950 সালে আগরতলায় জমিয়তে উলামা হিন্দের এক বিশাল কনফারেন্স হয়, যার প্রধান অতিথি ছিলেন মাওলানা তাহির সাহেব (রহঃ)। ওই কনফারেন্সে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী শচীন চন্দ্র সিংহও উপস্থিত ছিলেন। তিনি তাঁর ভাষণের জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেন । তাঁর ভাষণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাওলানা তাহির সাহেব সভাপতির অনুমতি নিয়ে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, কংগ্রেসের তিরঙ্গা পতাকা তলে দাঁড়িয়ে যে মুখ্যমন্ত্রী জমিয়তের ইতিহাস জানেনা, সে একটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয় কিভাবে? আর যদি ইতিহাস না জেনে বা না জানার ভান করে, জমিয়তের ব্যপারে কুরুচিকর মন্তব্য করেন, তবে তার প্রতি তীব্র প্রতিবাদ জানাই । তাঁর এই প্রতিবাদে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয় শ্রোতাদের মধ্যে। মুখ্যমন্ত্রী বিরস বদনে প্রস্থান করেন । ✍সুন্নত তথা শরিয়তের খাঁটি অনুসারী✍হজরত মরহুম সারাটি জীবন প্রতিটি কাজে-কর্মে ব্যক্তিগত জীবনে কিংবা পারিবারিক বা সামাজিক জীবনে সুন্নতের পরিপুর্ন অনুসারী ছিলেন । প্রত্যহ ভোরে তসবীহ, তেলাওয়াত, সারাদিন বইপত্র পাঠ এবং লেখালেখি করা তাঁর সারা জীবনের একটা নিয়ম মাফিক কাজ ছিল। কখনো এর ব্যতিক্রম হতে দেখা যেত না। সুন্নতের প্রতি নিজে যেমন অনুসারী ছিলেন, তেমনি অন্যদেরও তার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন । কখনো কেউ তার বিপরীত করলে দারুন চটে যেতেন । একদা হজরত মাদানী (রহঃ) ও হজরত মরহুমের সাথে মাদরাসার ফান্ড ও দ্বীনি মক্তবের ফান্ড একত্রে রাখা না-রাখা নিয়ে বেশ বাক-বিতন্ডা হয়। তখন হযরত মাদানী (রহঃ) হজরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহঃ)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, দুটো ফান্ড একত্রে রাখা জায়েয আছে । কিন্তু হযরত বলেন---না, এটা আমি করব না । মাদানী (রহঃ)একটু যেনো মনঃক্ষুণ্ণ হলেন। পরে হজরত তাঁকে খুশি করেন । অবশেষে তিনি হযরতের সিদ্ধান্তকে স্বীকৃতি দিয়ে বলেন, ঠিক আছে আলাদাই রাখুন। একদা কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র তার ম্যাকলিওড স্ট্রিটের বাড়িতে একটা বড় মাছ, এক বোতল ঘি হাদিয়া স্বরূপ আনল। হজরত তা সুন্নতের খাতিরে সাদরে গ্রহণ করলেন। মাছটা যথারীতি বাড়িতে রান্নার ব্যবস্থাও হয়ে গেছে। এমন সময় ছেলেটা হযরতের কানে কানে বলল, "হুজুর পরীক্ষায় একটু কনসিডার করেছেন?" তখন এই কথা শুনে তিনি দারুণ রেগে গেলেন এবং বাড়িতে আওয়াজ দিয়ে বললেন, ওই মাছ ও ঘি জলদি নিয়ে এসো । যেই কথা সেই কাজ। কালবিলম্ব না করে ওই গুলো ফেরত নিয়ে এলো। সেগুলো থলিতে ভরে বললেন, এই নাও, তোমার হাদিয়া এবং এক্ষুনি তুমি এখান থেকে বেরিয়ে পড়ো । একথা শুনে ছেলেটি হযরতের পা ধরে কাঁদতে লাগলো এবং বলল, হজরত আমাকে এবারের মত ক্ষমা করুন।,আমি আর কক্ষনো এমন বলবো না ।হজরত বললেন, ঠিক আছে । ক্ষমা করলাম । কিন্তু আজ এটা আমি কোনমতেই গ্রহণ করবো না । তখন ছেলেটি মাছের থলিটি নিয়ে দারুণ লজ্জিত হয়ে ঘাড় নিচু করে হজরতের বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো। ✍হযরতের আখলাক চরিত্র ও গুণাবলি✍দূর থেকে দেখলে মনে হত তিনি অতি কঠোর ও গম্ভীর মেজাজের। কিন্তু কাছে গিয়ে কথাবার্তা বললে, আলাপ-পরিচয় করলে তখন মনে হত, সত্যিই ইনি একজন কোমল প্রকৃতির মানুষ । নবীগুণে গুণান্বিত ছিলেন । গরিব বা অসহায় ব্যক্তিদের তিনি ছিলেন পরম বন্ধু। তাদের বিপদে-আপদে সর্বদা সাহায্যের হাত প্রশস্ত করে দিতেন। যেটা সহজে কেউ বুঝতে পারত না। নিজে সর্বদা ঢিলেঢালা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, সাদা পোশাক পছন্দ করতেন । সুন্নতের অনুসারী ছিলেন, তাই তিনি খেজুরের ছোবড়া চামড়ার কভারে দিয়ে বালিশ তৈরি করে ব্যবহার করতেন। প্রায় সারাটি জীবন তিনি হাঁপানি রোগে ভুগেছেন। কিন্তু তার জন্য কখনো আল্লাহ-আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো বুলি তাঁর মুখে থেকে উচ্চারণ হয়নি । যে অবস্থায় থাকতেন, তাতেই আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতেন। মাঝেমধ্যে শ্বাসকষ্ট এত বৃদ্ধি পেত যে, শুতে পারতেন না । ফলে, সারারাত বসে বসে আল্লাহ !আল্লাহ ! করতেন। কিন্তু এই রোগ-ব্যাধির জন্য কারো কাছে কোনো অভিযোগ করতেন না। বরং বলতেন, আল্লাহ যাকে মায়া করেন, তাকে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি দিয়ে পরীক্ষা করেন। হজরত মরহুম বাংলার আলেম সমাজ তথা প্রায় সর্বস্তরের লোকের মুরুব্বি ও শুভাকাঙ্ক্ষি ছিলেন। পারিবারিক, সামাজিক ও যে কোনো শরয়ী সমাধানে তিনি ছিলেন সবার আস্থাভাজন ও আশ্রয়স্থল । ✍শুভ বিবাহ ✍1948 সালের ডিসেম্বর মাসে হজরতের শুভ পরিণয় অনুষ্ঠিত হয় । অসমের বদরপুরের খাদিমান মাঠে অল ইন্ডিয়া জমিয়তে উলামার এক সাধারণ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় । সেই সুবর্ণ সময়ে হযরত মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী (রহঃ) মাওলানা তাহির ও হালিমা খাতুনকে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে তাঁদের সুখময় দাম্পত্য সম্পন্ন করেন। ✍মাতা-পিতার সেবা-যত্ন✍হযরত মরহুম মাতা-পিতার সেবা -যত্নের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতেন। ফলে তাঁর সেবা-যত্নের কথা এলাকার লোকের মুখে অতি চর্চিত ছিল । কোন এক রাতে তাঁর আব্বা তাঁকে বললেন, তাহির! আমার হাত-পা-মাথা টিপে দাও। আদেশমাত্রেই কালবিলম্ব না করে পিতার খিদমতে নিজেকে নিয়োগ করলেন । ইতিমধ্যে তাঁর পিতা গভীর নিদ্রায় ডুবে গেলেন। তাহাজ্জুদের সময় যখন তাঁর নিদ্রাভঙ্গ হল, তখন তিনি দেখলেন তাহির পিতার খেদমত মশগুল আছেন। তখন তিনি বললেন, তাহির! যাও ঘুমিয়ে পড়ো । এবার উনি তাহাজ্জুদ পড়ে অনুগত পুত্রের জন্য দরবারে ইলাহিতে দোয়া করলেন--- 'ওগো আল্লাহ! তুমি আমার তাহিরকে দ্বীনের জন্য কবুল করো । ইহকালে-পরকালে সফলকাম করো ।' তারই ফলশ্রুতি বহু মান্যগণ্য ব্যক্তি, তাঁকে আশাতিরিক্ত সম্মান দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন এবং সেই সব মান্যগণ্য ব্যক্তিরা নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে করতেন। ✍ তাকওয়া ও পরহেযগারী ✍তাকওয়া ও পরহেযগারী একটা গোপন ও অভ্যন্তরীণ গুণ। যেটা বাহ্যিকভাবে পরিলক্ষিত হয় না, একমাত্র বান্দা ও স্রষ্টার সঙ্গে লুক্কায়িত থাকে। তাই হযরত কখনো কাউকে বুঝতে দিতেন না। একদা বাড়িতে ঔষধ ক্রয়ের খুবই দরকার থাকা সত্বেও তিনি ক্রয় না করে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে কোন এক খাদিম তাঁকে ঔষধ ক্রয় করার কথা স্মরণ করে দিলে তিনি বললেন, মনে আমার অবশ্যই আছে । কিন্তু ক্রয় করার মতো ব্যক্তিগত টাকা এখন পকেটে নেই। যা আছে এ সব মাদ্রাসার টাকা। চলো এখন, পরে ক্রয় করা যাবে। হযরত চাইলে মাদ্রাসার টাকা দিয়ে কিনে পরে তা পরিশোধ করতে পারতেন। কিন্তু আমানতের সামান্য খেয়ানতের ভয়ে তা করলেন না! ✍ অনাড়ম্বর জীবনযাপন ✍কলকাতায় আলিয়া মাদ্রাসায় অধ্যাপনাকালে হজরত মরহুম জীবনের সিংহভাগ সময় ভাড়াবাড়িতে কাটিয়েছেন । ইচ্ছা করলে সে যুগে কলকাতার মতো বিলাসবহুল শহরে ফ্ল্যাট-বাড়ি কিনে তিনি অতি আরাম-আয়েশের সঙ্গে সুখে-স্বাচ্ছন্দে জীবনযাপন করতে পারতেন । কিন্তু হযরত সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করেননি।যেহেতু তাঁর মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল আখেরাত, তাই তিনি "কুন ফিদ দুনিয়া কাআন্নাকা গরীবুন আও আ-বিরু সাবিলিন্"---"তোমরা এই জগতে একজন মুসাফির কিংবা প্রতীকের জীবনযাপন করো"--- এই হাদিস পাকের জাজ্বল্য দৃষ্টান্ত ছিলেন। অনেক সময় তাঁর বিশেষ বন্ধুবর্গরা স্থায়ী বাড়ি নির্মাণ করতে পীড়াপীড়ি করলে হযরত তাদের কথায় বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করতেন না। অবশেষে হযরত মাদানী (রহঃ) এ ব্যাপারে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি তাঁর কথা আর উপেক্ষা করতে পারলেন না। বাধ্য হয়ে তাঁর পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রয় করে জামিয়া ইসলামিয়া মাদানিয়া মাদ্রাসার সংলগ্ন সামান্য একটু জমি ক্রয় করে মোটামুটি মাথা গোঁজার মত একটা ছোট্ট ঘর তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং শওকত নামে একজন দক্ষ মিস্ত্রিকে ( যিনি আজও জীবিত আছেন ) ডেকে পাঠালেন এবং কেমন বাড়ি হবে ও তার বাজেটই বা কতটুকু সবই বুঝিয়ে দিলেন। কিন্তু মিস্ত্রি একটু ভাবনা করে সবকিছু পাকাপোক্ত ও মজবুত করে কাজ শুরু করলে হজরত দেখে ক্রোধে ফেটে পড়লেন এবং বকাবকিও করলেন। এই কলমচি সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলো। ✍ হযরত মাদানী (রহঃ)-এর বিশেষ খলিফা ✍হযরত মাদানী (রহঃ) ভারত ও বহির্ভারতে মোট 86 জন খেলাফাত প্রদান করেন। তন্মধ্যে মাওলানা তাহির (রহঃ) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । তাই তিনি শুধু শিক্ষাবিদ, সুলেখক, সুবক্তা এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী মানুষ ছিলেন না, বরং আধ্যাত্মিক জগতেরও এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন। যার সুবাদে পশ্চিমবঙ্গে আলেম-ওলামা মুরিদ হয়ে খেলাফত লাভ করেন। যেমন দক্ষিণ 24 পরগনার যুগদিয়া হান্নানিয়া মাদ্রাসার সুযোগ্য মুহতামিম মাওলানা মসিহুর রহমান সাহেব, মরহুম মাওলানা আব্দুল মান্নান সাহেব, হুগলির হযরত মাওলানা শামসুল আলম চৌধুরী, হজরত মাওলানা ওয়াসিম আলি প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । 👉দ্বিতীয় কিস্তিঃ✍মাওলানা তাহির ( রহঃ) এক উজ্জ্বল নক্ষত্র✍( যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদকের অভিমত) সেই সময়কার পশ্চিম বাংলার এক নম্বর বাংলা দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সাংবাদিক শ্রী প্রেম রঞ্জন পন্ডিত মাওলানা মোহাম্মদ তাহির সম্পর্কে বলেছেন----- "কোনো এক সন্ধ্যায় মাওলানা তাহির সাহেবের সাথে সাক্ষাৎকালে বিভিন্ন প্রসঙ্গের আলাপ আলোচনার মধ্যে তিনি বললেন, দেখুন মহাশয়! বই লেখা আমার পেশা নয়, নেশাও নয়। লিখতে হয় বলে লিখি। কর্তব্যের অনুরোধে, প্রয়োজনের তাগিদে। গুটিকয়েক কথাতেই আমি মাওলানা তাহির সাহেবের পাণ্ডিত্যের গভীরতা আঁচ করি। জীবনের প্রথম পর্বে আলিয়া মাদ্রাসায় অধ্যাপনা, তারপর দমদম এয়ারপোর্ট সংলগ্ন জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ তিনি। ধর্মপ্রাণ এই মানুষটাকে শুধু অধ্যক্ষ বলায় তাঁর মর্যাদার অবমাননা করা হবে। নিঃসন্দেহে বলা যায়, ইনি ইসলাম ধর্মের বিশেষ গবেষকদের একজন বিশিষ্ট গবেষক। সেটা তাঁর পাণ্ডিত্যপূর্ণ অমূল্য গ্রন্থমালা গুলি প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। মাত্র কয়েক মুহূর্তের আলাপ-আলোচনায় বুঝলাম যে, শুধু ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান-গরিমা ও পাণ্ডিত্য সীমাবদ্ধ নয়, বরং হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে তাঁর যথেষ্ট জ্ঞান আছে। 1988 সালে 'দেশ' পত্রিকায় হিন্দু ধর্মের উপর তাঁর একটা প্রবন্ধ প্রকাশ হয়। সেটা ওই সময় আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তাঁর কথায়---- হিন্দু বলে কোনো জাতি ছিল, এমন প্রমাণ যেমন অতীত ইতিহাস নেই, তদ্রুপ হিন্দু ধর্ম বলে কোন ধর্ম ছিল না। ইতিহাসের অগাধ সমুদ্র মন্থন করেও এর কোন ছিটেফোঁটাও খুঁজে পাওয়া যায় না। বরং হিন্দুজাতি ও হিন্দুধর্মের পরিবর্তে যদি বৈদিক ধর্মকে পৌরাণিক ধর্ম বলা যায়, তবে তা যথেষ্ট পরিমাণে যুক্তিসঙ্গত হতে পারে। যাই হোক, যখন সঙ্গ ত্যাগ করার পরিকল্পনা হল, তখন তিনি বললেন, 'দয়া করে আমার ছবিটা কাগজে ছাপবেন না । বুঝলাম, অতি নিরহংকারী মাওলানা তাহির বাস্তবেই আত্মপ্রচার বিমুখ।'✍ দ্বীনের প্রচার-প্রসারে মক্তব ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত✍বাংলায় মুসলিম ঘরের ছেলে মেয়েদের এমনকী তাদের পিতা-মাতা, অভিভাবক স্কুল-কলেজ তথা জাগতিক শিক্ষা অর্জনে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যতটা তৎপর হচ্ছে, ততটাই উদাসীন দ্বীনি শিক্ষা অর্জনে। ফলে নিজেদের শিকড়কে ভুলে যাচ্ছে। এই জাতি ও সমাজকে বাঁচাতে হলে প্রাথমিক দ্বীনি শিক্ষা তথা মক্তব শিক্ষা অতি আবশ্যক। একথা ভেবে মাওলানা মুহাম্মদ তাহির সাহেব কালবিলম্ব না করে পশ্চিমবঙ্গের বড় বড় পন্ডিত ও বিচক্ষণ আলেম-ওলামাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে তাঁদের সম্মুখে সমস্যার কথা সবিস্তারে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ইমান-আখলাক বাঁচাতে গেলে দ্বীনি মক্তব চালু করা ছাড়া কোন বিকল্প রাস্তা খোলা নেই। হযরতের এই আবেদন এবং মতামতকে সাধুবাদ জানিয়ে সকলেই সাড়া দিলেন। এরপর তাঁর তৎপরতায় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মক্তব খোলার প্রচেষ্টা শুরু হয়। 1963-64 সালে প্রায় 600 টি মক্তব চালু হয়ে যায় ওই উদ্যোগের ফলে। পরবর্তীতে প্রায় 1000 হয়েছিল। যে সমস্ত মক্তব বিভিন্ন কারণে মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছিল, সেগুলোকেও পুনর্জীবিত করা হয়। শুধু তাই নয়, বরং সুষ্ঠুভাবে পঠন-পাঠনের জন্য একটি বোর্ড ও সিলেবাস তৈরি করেন দিল্লি কেন্দ্রীয় জমিয়তে উলামার সহযোগিতায়। শিক্ষকদের বেতনের জন্য মুষ্টিচাল এর ব্যবস্থা করেন এবং যাতে সুন্দরভাবে চলে তার জন্য জেলায় তিনি বেতনভুক্ত পরিদর্শক ও নিযুক্ত করেন। হযরতের সুপরামর্শে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে প্রাথমিক দ্বীনি শিক্ষার জন্য যেমন একাধিক মক্তব গড়ে উঠেছিল, ঠিক তেমনই হাদিস-কুরআন শিক্ষা, প্রচার-প্রসার যাতে হয়, তার জন্য বিভিন্ন জেলায় একাধিক মাদ্রাসাও গড়ে তোলেন। উত্তর 24 পরগনার মালতীপুর মাদ্রাসা, কালিকাপুর মাদ্রাসা, হুগলি জেলায় শামতা মাদ্রাসা তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।✍ মাদ্রাসা জামিয়া মাদানিয়ার সূচনা✍হযরত নিজে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করলেও দরসে নিযামী মাদ্রাসা তা'লীম ও তারবিয়াতের যে খাঁটি নবীপ্রেমিক ও সুদক্ষ আলেম গড়ার কারখানা তা তিনি বিলক্ষণ জানতেন। তাই দমদম বিমানবন্দর সংলগ্ন বাঁকড়াতে 4 বিঘা জমি ক্রয় করে তাঁর শায়েখ হযরত মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী (রহঃ)-এঁর স্মৃতিতে জামিয়া ইসলামিয়া মাদানিয়া স্থাপন করেন। যার ভিত্তিস্থাপন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সর্বভারতীয় সভাপতি হযরত মাওলানা আস'আদ মাদানী (রহঃ)-এঁর পবিত্র হাত দ্বারা 25 ফেব্রুয়ারি 1977, শুক্রবার করা হয়। জামিয়া ইসলামিয়া মাদানিয়া--- মাদানীনগর প্রতিষ্ঠানের নাম করণ করা হয়। সূচনালগ্ন থেকে মৃত্যুকাল অবধি হজরত নিজেই জামিয়ার উপাচার্য ছিলেন। সেই সময় এই কলমচিরও এই বিদ্যানিকেতনে দীর্ঘ চার বছর হযরত সংস্পর্শে থেকে শিক্ষা-দীক্ষা অর্জন করার সৌভাগ্য হয়েছিল। আলহামদুলিল্লাহ । হযরতের পরলোকগমনের পর তাঁরই উত্তরাধিকারী সুযোগ্য পুত্র হযরত মাওলানা মুহাম্মদ জাকির কাসেমী তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়ে সুনামের সঙ্গে জামিয়ার যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সম্পাদন করে চলেছেন । হযরত মাওলানা সিদ্দীকুল্লাহ সাহেব ওখানে মুদারিস ছিলেন, জমিয়তের কাজও মাদ্রাসা থেকে করতেন।✍ দাঙ্গা প্রতিরোধে ভূমিকা ✍1992 সালে বাবরি মসজিদ শহীদ হওয়ার পরে যখন পশ্চিমবঙ্গ সহ গোটা ভারত উত্তাল হল, তখন ক্ষিপ্ত জনগণকে শান্ত করার জন্য কেন্দ্রীয় জমিয়ত এর পক্ষ থেকে উত্তর 24 পরগনা ভেবিয়া-চৌমাথা, দক্ষিণ 24 পরগণার বারাসাত কলেজ মাঠ ( দক্ষিণ বারাসাত), হুগলি জেলার শামতা, বর্ধমান জেলার কাটোয়া খাজুড্ডীতে বিশাল আকারের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কাতারে কাতারে জনগণ সভায় উপস্থিত হয়। প্রতিটি সমাবেশে হযরত মাওলানা আস'আদ মাদানী সাহেব, হযরত মাওলানা তাহির সাহেব ও হযরত মাওলানা সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী সাহেব সম্প্রীতি রাখার জন্য জোরালো বক্তব্য পেশ করেন। পরিস্থিতি যার ফলে অনেকটাই শান্ত হয়। ওই সময় বিশাল দাঙ্গার হাত থেকে পশ্চিমবঙ্গ সহ অন্যান্য রাজ্য তথা ভারত রক্ষা পায়।✍ মাহকামায়ে শরিয়াহ ও মাদরাসা সমন্বয় সমিতি গঠনের হযরতের অবদান ✍মাহকামায়ে শরিয়াহ তথা ইসলামী ন্যায়ালয় হাজরত মরহুম প্রথমে ম্যাকলিওড স্ট্রিটে ও পরে দমদম মাদ্রাসায় চালু করে খুব দক্ষতার সঙ্গে সেটা পরিচালনা করেন। বলাবাহুল্য বর্তমান প্রচলিত মাদ্রাসা সমন্বয় সমিতি দারুল উলুম দেওবন্দের নেতৃত্বে পরিচালিত হলেও এর বহু পূর্বে হযরত মরহুম দমদম মাদ্রাসা, যুগদিয়া ও রাজাবাজারের বাইতুল উলুমকে নিয়ে মাদ্রাসা সমন্বয় সমিতি গঠন করেন এবং সমন্বয় পরীক্ষার সিস্টেম চালু করেন। মাওলানা সিদ্দীকুল্লাহ চৌধুরী রাজাবাজারের মাদ্রাসার ছাত্রদের পরীক্ষায় বসার বন্দোবস্ত করেন। দেশের বেসরকারি মাদ্রাসা ব্যবস্থা যে সংঘটিত হওয়া দরকার তিনি তা শুধু উপলব্ধি করেননি। বরং একটা সংঘটিত কাঠামো গঠন করে হয়ে ওঠেন পথপ্রদর্শক।✍ হযরত হাজরত মরহুম এর কিছু উপদেশ ✍১। মাদ্রাসার বা অন্যের আমানত নিয়ে নিশিযাপন করবেনা। মারা গেল তুমি এখানে পরিত্রাণ পেলেও খোদার কাছে তোমাকে জবাবদিহি করতে হবে। ২। কোনো পদে নতুন লোক নিয়োগ করার চেয়ে অভিজ্ঞ ও পুরাতন লোককে সংশোধনের মাধ্যমে পুনর্নির্বাচন করা অধিক শ্রেয়। ৩। দশজনকে বুখারী শরীফ পোড়ানো অপেক্ষা 100 জন ছেলে-মেয়েকে কলেমা-কালাম শেখানো অতি উত্তম। ৪। আত্মীয়তার সম্পর্ক বাড়িতে আর কাজের সম্পর্ক কর্মস্থলে।✍ গ্রহ-রচনা ও পত্রিকা প্রকাশ ✍সময়ের চাহিদার দিকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেছেন তিনি, যা আজও তাঁর অমর কৃতিত্ব বহন করে চলেছে। তাঁর রচিত পুস্তকগুলি হল---- ১। রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইসলাম, ২। কুরআনের কাহিনী, ৩। নতুন ধর্ম ও মওদূদী ফিতনা, ৪। জন্মনিয়ন্ত্রণ, ৫। প্রেমের পঞ্চ অধ্যায়, ৬। মরণের পরে, ৭। শেষ নবী, ৮। তরজমা ও তাফসীর, ৯। ইনকেলাব, ১০। সাধনা ও সংবিধান, ১১। ইসলামের টানে, ১২। সাহাবাদের মান, ১৩। সমস্যা ও সমাধান, ১৪। খ্রিষ্ট ধর্ম ও বাইবেল, ১৫। কাদিয়ানী জালিয়াত, ১৬। আল-মানার, ১৭। মাদানী চরিত, ১৮। সমাজ ও উলামা সমাজ, ১৯। রমণীর মান, ২০। তাসবীহ ও রমজানের ফজিলত প্রভৃতি। উল্লেখিত গ্রন্থ মালার মধ্যে মহাগ্রন্থ কুরআনের তরজমা ও তাফসীর রয়েছে। শোনা যায়, গ্রন্থখানা মরহুম হযরত মাওলানা আস'আদ মাদানী সাহেবের মাধ্যমে ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে দেখালে তিনি তাঁকে পুরস্কৃত করতে চাইলে হযরত তাতে কোনো আগ্রহ প্রকাশ করেননি। অসংখ্য মক্তব ও মাদ্রাসার মাধ্যমে মুসলিম ছেলে মেয়েদের ইসলামি প্রাথমিক শিক্ষা ও মূলনীতিমালা শেখানো হলেও বয়স্ক শিক্ষিত মানুষের মধ্যে দ্বীনি চিন্তা-চেতনা কীভাবে আনা যায়, তার জন্য হযরত "ইনসানিয়াত" নামক জ্ঞানগর্ভে পরিপূর্ণ কুরআন-হাদিসের আলোকে এক সাপ্তাহিক পত্রিকা চালু করেন। এই পত্রিকা যুগোপযোগী বিভিন্ন মাসলা মাসায়েলে সম্মৃদ্ধ থাকত। উপরন্ত হযরতের সম্পাদকীয় কলমটা অতি আকর্ষণীয় ও তথ্যপূর্ণ হত। যার ফলে ইনসানিয়াত এর আপামর পাঠক পাঠিকা ও শিক্ষিত সমাজ দ্বিতীয় সপ্তাহের পত্রিকার অপেক্ষায় অধীর হয়ে থাকত। তবে দুঃখের বিষয় হযরতের প্রচন্ড শারীরিক অসুস্থতা সত্বেও অতি কৃতিত্বের সঙ্গে দীর্ঘ পাঁচ বছর চালানোর পরে তা বন্ধ করতে বাধ্য হন। ফলে বাংলার অসংখ্য পাঠক-পাঠিকার একটা আফসোস থেকেই যায়। যা আজও বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কর্ণগোচর হয়। তার এই সম্পাদনায় "ইনসানিয়াত" পত্রিকা ধারাবাহিকভাবে পাঁচ বছর প্রকাশিত হওয়ার সুবাদে সম্পাদক আবদুল আজিজ আল আমান এর সম্পাদিত "কাফেলা" পত্রিকার পক্ষ থেকে ইসলামী জ্ঞান সাধনার জন্য মাওলানা মুহাম্মদ তাহির সাহেবকে 1984 সালে " রসূলুল্লাহ্" (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম )পুরস্কৃত হন । "নতুন গতি" পত্রিকার তরফে তাঁকে "নতুন গতি সাহিত্য পুরস্কার" প্রদান করা হয় 1994 সালে।✍ হযরতের ইন্তেকাল ✍মৃত্যুর দু-একদিন পূর্বে হযরত একটু জ্বর-জ্বর অনুভব করেন। ডাক্তার, কবিরাজ ডাকা হল। কিন্তু তাতে সুফল হলো না। তাই সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে 1994 সালের 26 নভেম্বর হযরত বঙ্গ-অসমের আপামর ভক্ত, অনুরাগী, আত্মীয়-স্বজনদের চিরতরের মতো ত্যাগ করে স্রষ্টার সাক্ষাতে মিলিত হন। (ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না-ইলাইহি রজিউন ) তাঁর এই মৃত্যুসংবাদ ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ, দুবাই, সৌদি আরব ইত্যাদি দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় শ্রদ্ধা সহকারে প্রকাশিত হয়। তাঁর ইন্তেকালের খবর শুনে শুধু বাঙালি বা অসমিয়া ভেঙে পড়েনি, বরং অবাঙালিদের মধ্যেও তাঁর শূন্যতার প্রভাব দারুণভাবে পড়েছিল। মৃত্যুকালে মাওলানা মুহাম্মদ তাহির (রহঃ) স্ত্রী, তিন পুত্র ও পাঁচ কন্যা রেখে যান। বাঁকড়া মসজিদ সংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম কোণে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয় । মৃত্যুর পূর্বে হযরত নিজেই বন্দোবস্ত করে পাথরে খোদাই করে নিম্নোক্ত নিজের লেখা কবিতাটি লিখে রেখে গিয়েছিলেন, যেটি তাঁর মৃত্যুর পরে লাগানো হয়----'হে বন্ধু আমার !ক্ষণিক দাঁড়ায়ে মোর কবরের পাশে খোদারে বলে যাও, ক্ষমা করো দাসে। দু-চারটি আয়াত পড়ে দিও উপহার তোমার চরণে এই মিনতি আমার। '✍ অলঙ্কৃত পদসমূহ ✍স্বাধীনতা লাভের আগে ও পরে হযরত মরহুম জমিয়তের কর্ণধারদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জাতি ও দেশের সেবায় যেভাবে আত্মনিয়োগ করেছিলেন, নিঃসন্দেহে তা প্রশংসার দাবি রাখে । তাই কেন্দ্রীয় জমিয়তের পক্ষ থেকে তাঁকে রাজ্য জমিয়তের সভাপতি নিযুক্ত করা হয়। এছাড়া হজরত জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সর্বভারতীয় ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যও ছিলেন । কেন্দ্রীয় জমিয়তের সহ-সভাপতিও হয়েছিলেন । উপরন্তু তিনি সেন্ট্রাল হজ কমিটির দু'বার সদস্য হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন । মাদানীনগরে অনুষ্ঠিত এক সভায় মুহাদ্দিসে কবীর, মরহুম হজরত মাওলানা হাবিবুর রহমান আজমী সাহেব (রহঃ)-কে সারা ভারতব্যাপী হাজার হাজার আলেম-ওলামাদের উপস্থিতি ও ঐক্যমতে আমীরে শরিয়ত নির্বাচন করা হয়। সেই অপূর্ব সন্ধিক্ষণে পশ্চিমবাংলার আমীরে শরিয়ত মরহুম হযরত মাওলানা তাহির সাহেবকে নির্বাচন করা হয়। আমৃত্যু তিনি এই পদে বহাল থেকে বাংলার আপামর মুসলিম জনগণের সর্ব সমস্যার সমাধানে অনন্য ভূমিকা পালন করেন।( সমাপ্ত) তথ্যসূত্রঃ--পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের সভাপতি হযরত মাওলানা #সিদ্দীকুল্লা_চৌধুরী সাহেবের তত্ত্বাবধানেপশ্চিমবঙ্গ রাজ্য জমিয়াতে উলামায়ে হিন্দ জমিয়ত ভবন, বাঁকড়া,কলকাতা- 700051 কর্তৃক প্রকাশিত পুস্তকঃ-#সভ্যতার_নির্মাণে_মুসলিম_মনীষী ( পশ্চিমবঙ্গের বরণীয় মুসলিম মনীষীদের জীবনী) সম্পাদনাঃ- আসাদুল ইসলাম। বরণীয় মুসলিম মনীষীদের জীবনী এবং গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক বিষয়ে জানতে আপনি নিম্নলিখিত👇ফেসবুক পেজগুলি Like & follow করতে পারেন।----------------------------------------------------------------#সবার_ইনসাফ#জমিয়তে_উলামার_প্রেমিকগণ#কওমী_আওয়াজ#পশ্চিমবঙ্গ_জমিয়ত_উলামায়ে_হিন্দ-------------------------------------------------------------------------Touch the following link to know about important and historical issues.--------------------------------------------------------------------------গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক বিষয়ে জানতে নিম্নলিখিত 👇 লিংকে স্পর্শ করুন।----------------------------------------------#সভ্যতার_নির্মাণে_মুসলিম_মনীষী#Revisiting_our_Predecessors#আকাবিরদের_স্বরণে_জমিয়ত#ThankYouDarulUloomDBD#উলামায়ে_দেওবন্দ#জমিয়ত উলামা হিন্দ#Jamiat Ulama-i-Hind#দারুল উলুম দেওবন্দ#india#freedomfighter#Freedom_Fighters_Of_India#indianhistory#ভারতীয়#মুসলিম #علمائے_دیوبند👉 শেয়ার করুন। 👉 কপি করবেন না। ------------------------------------------------------------#md_asad_qasmi এর ওয়াল থেকে। -----------------------------------------------------------
Thursday, May 27, 2021
করিমগঞ্জ জেলা যুব নদওয়ার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল সংগঠণের প্রতিষ্টাতা, উত্তর পূর্ব ভারতের প্রথম আমিরে শরিয়ত, আসাম বিধানসভার ছয় বারের বিধায়ক স্বাধীনতা সংগ্রামী তথা বাংলা ভাষা আন্দোলনের বরিষ্ট নেতা মাওলানা আব্দুল জলিল চৌধুরী রহঃ এর নামে একটি অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা চালু করার। সম্প্রতি কোবিড-১৯ মহামারির সংকট সময়ে অস্থায়ীভাবে একটি অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা চালু করা হয়েছে। কিন্তু স্থায়ীভাবে একটি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা করার জন্য করিমগঞ্জ জেলা যুব নদওয়ার এক প্রতিনিধি দল আজ দুপুর ১২ ঘটিকায় আবর্ত ভবনে উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে প্রথমে বিধায়ক মহাশয়কে সংগঠণের তরফ থেকে শুভেচ্ছা বার্তা প্রদান করা হয়। এমারতে শরয়ীয়াহ ও নদওয়াতুত তামীরের কর্মী মাওলানা আব্দুল ওয়ারিস বিধায়কের কাছে মাওলানা আব্দুল জলিল চৌধুরী রহঃ এর স্মরণে একটি অ্যাম্বুলেন্স প্রদানের দাবি জানাতেই তিনি তা সাদরে গ্রহণ করেন। বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ প্রতিনিধি দলকে এই বলে আশ্বস্ত করেন যে আগামী জুলাই মাসে ফাণ্ডে যে টাকা আসবে সেই ফাণ্ডের প্রথম কাজই হবে এই অ্যাম্বুলেন্স। যুব নদওয়ার প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন জেলা যুব নদওয়ার উপসভাপতি মাওলানা এটিএম জাকারিয়া, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জসীম উদ্দিন, নদওয়ার কর্মী মাওলানা আব্দুল ওয়ারিস, যুব নদওয়ার কর্মী এ কে জাকারিয়া, মসরুর আহমদ, কমরুল ইসলাম, খয়রুল হাসান ও আনিপুর আল ইক্বরা একাডেমির খয়রুল আলম ও সাবির আহমদ প্রমুখ। বিধায়কের এহেন কাজের প্রতি সংগঠণের সর্বস্তরের কর্মী সাধুবাদ জানিয়েছেন।
Sunday, April 18, 2021
"হরিননামা"আখেরি জমানা যবে হইবেক সবিজাহির হইবা তবে মহামদ নবিহৈছে না হইব কেও তান বরাবরকুরান নাজিল হৈব তাহান উফরকিতাব তরিক যার জেতেক দলিলতাহান আমলে হৈব এসব বাতিলপড়িবা উম্মতে তান কলিমা সাদতযার দিন রৈব জারি রুজ কিয়ামতকুনু কালে পাও কেও উম্মত কে তানমানিও তুমরা সবে আমরার সমানকরিবা দিনের কাম থাকিবা ইমানেসাইট আউলআর মুরাদ পাইব একেক জনেজহার সফাতের আসে উমেদ রাতরি দিনতাহান উমত যারা সাদতি মমিনএমতে কহিয়া আছৈন যত ফেগাম্বরযার যে উমতের কাছে সেমত খবরনুর মহাম্মদ নবি হবিব আল্লারমহাম্মদ হতি ইজত বেসি হৈব কারছুবহান আল্লা কি লেকিছে আমার কফালেরাকিব নি জিন্দেগী মর দিনের পিহালেঅদম আজমতে বলে এবাদতে হিনকত বড় নছিবে মিলে মহামদি দিন
Monday, February 15, 2021
শেরুলবাগ লাফাশাইল আঞ্চলিক নদওয়া ও যুব নদওয়ার কমিটি পুনর্গঠিত
করিমগঞ্জ জেলা এমারতে শরয়ীয়াহ ও নদওয়াতুত তামীরের অন্তর্গত শেরুলবাগ লাফাশাইল আঞ্চলিক নদওয়া ও যুব নদওয়া পুনর্গঠনের নিমিত্তে আঞ্চলিক মুন্তাজিমার যৌথ সাধারণ সভা অনুষ্টিত হয়। এতে পৌরহিত্য করেন বিদায়ী কমিটির উপ-সভাপতি জানাব লোকমান হোসেন সাহেব। বিদায়ী কমিটির সম্পাদক আলহাজ লুৎফুর রহমান সাহেব বিগত পাঁচ বছরের কাজের খতিয়ান তুলে ধরেন। পরবর্তীতে উপস্থিত সভ্যগণ সর্বসম্মতিতে সভাপতি ও সম্পাদক পদে যথাক্রমে জানাব আবুল কালাম ও মাস্টার ফয়ছল হোসেনকে মনোনীত করা হয়। উপ-সভাপতি পদে জানাব লোকমান হোসেন সাহেবকে মনোনীত করা হয়। সহ-সম্পাদক হন সজু মিয়া ও প্রচার সম্পাদক হন আব্দুর রহমান কায়েস। ৭ জন সদস্য যথাক্রমে কমরুজ্জামান, আব্দুল কুদ্দুস, জলাল উদ্দিন, আব্দুর রউফ, আব্দুস সাত্তার , বুরহান উদ্দিন ও সালেহ আহমেদ। এছাড়াও পদাধিকার বলে ৫ জনকে কমিটির অন্তর্ভূক্ত করা হয়। তাছাড়া জেলা প্রতিনিধি হিসেবে ৬ জনকে মনোনীত করা হয় যথাক্রমে - মাওলানা আব্দুল ওয়ারিস, মাস্টার আছান উল্লাহ আহমেদ, হাফিজ আলতাফ হোসাইন, মাস্টার লুৎফুর রহমান, মাস্টার আশাবুল হক ও মাস্টার জুবায়ের আহমেদ।
পরবর্তীতে যুব নদওয়ার উপ-সভাপতি পদে মাওলানা নূরুল হাসান, সম্পাদক পদে বিদায়ী কমিটির সম্পাদক সালিকুর রহমান ও সহ সম্পাদক পদে হাফিজ সুফিয়ান আহমদকে মনোনীত করা হয়। পেরেন্ট নদওয়ার পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভিতরগোল সিনিয়র মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা ইসলাম উদ্দিন সাহেব ও যুব নদওয়ার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক তথা শিক্ষক মছরুর আহমেদ সাহেব।
Monday, February 1, 2021
পানিঘাট বাজারে ইমাম মুয়াল্লিমদের হাদিয়া বণ্টন নদওয়াতুত তামীরের।
করিমগঞ্জ জেলার ভিতরগুল পানিঘাট আঞ্চলিক নদওয়ার উদ্যোগে আজ ০৩ জুলাই ২০২০ শুক্রবার বিকাল ২-০০ ঘটিকায় পানিঘাট বাজার মসজিদের অত্র আঞ্চলিকের ২৪ জন ইমাম ও মুয়াল্লিমকে এক কালিন ১০০০/- (এক হাজার) টাকা করে হাদিয়া প্রদান করা হয়। কেন্দ্রীয় নদওয়ার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আঞ্চলিকের কর্মকর্তা ও কর্মীগণের উদ্যোগে স্বহৃদয় ব্যক্তি বর্গ থেকে টাকাগুলো সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ইমাম ও মুয়াল্লিমদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। আঞ্চলিক সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল লতিফ সাহেবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অত্যন্ত সারগর্ভ আলোচনা করেন এমারতে শরয়ীয়াহ ও নদওয়াতুত্ তামীরের প্রশাসনিক সম্পাদক মাওলানা ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাহেব। আল জামিয়ার অধ্যক্ষ মাওলানা ওয়ারিছ আহমদ সাহেব, অফিস সেক্রেটারি মাওলানা নয়ীম উদ্দিন চৌধুরী, জেলা যুব নদওয়ার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা যশিম উদ্দিন প্রমুখ। সকল বক্তারা তাদের মূল্যবান বক্তব্য উপস্থাপন করে বলেন আমীরে শরীয়ত ১ম ও আমীরে শরীয়ত ২য় এর রেখে যাওয়া কর্মগুলো যথাযথ ভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমাদের কর্তব্য। বিশেষ করে ছবাহী মক্তবের শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। আঞ্চলিক সম্পাদক মাষ্টার আসদ্দর আলী সাহেবের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভিতরগুল সিনিয়র মাদ্রাসার অধিক্ষক মাওলানা সব্বির আহমদ সাহেব, মাওলানা কুতুব উদ্দিন সাহেব, মাওলানা ইসলাম উদ্দিন সাহেব, মাওলানা আব্দুল ওয়ারিস, মাওলানা নজরুল ইসলাম সহ আঞ্চলিকের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মীবৃন্দ।
#পোষ্ট_সংগৃহীত ।
Thursday, January 21, 2021
লাফাশাইল তৈয়ীবিয়া মাদ্রাসায় ৭২ তম প্রজাতন্ত্র দিবস পালিত হবে।
আগামী ২৬শে জানুয়ারি ২০২১ ইংরাজি রোজ-মঙ্গলবার আমাদের মাদ্রাসায় ভারতের ৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবস এক আড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপিত হবে। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ০৭ ব্যাটেলিয়ন বিএসএফের লক্ষ্মীবাজার বিওপির কোম্পানি কমাণ্ডার মিঃ গুরদীপ সিং জী। এছাড়াও এলাকার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষাবিদগণ উপস্থিত থাকবেন। এদিনের অনুষ্ঠানে ক্বিরাত, গজল, আবৃতি,, ক্যুইজ, অঙ্ক দৌড় ও বক্তব্য প্রভৃতি প্রতিযোগিতা হবে। মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীর পাশাপাশি বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরাও এতে অংশগ্রহণ করবে। উক্ত অনুষ্ঠানকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য মাদ্রাসা পরিচালনা সমিতির তরফে সকলের নিকট জোরালো অনুরোধ করা যাচ্ছে।
প্রচলিত ওয়াজ মাহফিল সংস্করণ ও উত্তরণ
মুসলমান আমরা । সৎ পথের আদেশ এবং অসৎ পথের নিষেধ আমাদের বৈশিষ্ট্য । কেয়ামত অবধি পৃথিবীতে আর কোনো নবী প্রেরিত হবেন না । মহাপ্রলয় পর্যন্ত আল্লাহ প্রদত্ত কোন ধর্ম আত্মপ্রকাশ করবে না । মানব জাতিকে একত্ববাদের দাওয়াত প্রদান, শুভ্র-শ্বাশত ইসলামের দিকে আহ্বান, ইসলামের মহত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের জায়গান, অন্যসব অন্ধকার ধর্ম ও মতের অসারতা প্রমাণ উলামায়ে কেরামের অপরিহার্য ধর্মীয় দায়িত্ব । এ দায়িত্ব সত্যিই গুরুদায়িত্ব । মহানবী সাঃ এর অবর্তমানে ঝর্ণা-স্বচ্ছ, শিশির-শুভ্র ইসলামের প্রসার, তাঁর গুরুত্ব ও মহত্বের প্রচার, উম্মাহর আত্মিক ও বাহ্যিক উন্নতি সাধন, তাদের উন্নত ও আদর্শ চরিত্র গঠন, তাদের হৃদয়- মানসে আমলের গুরুত্ব স্থাপন এবং তাদের চলাফেরা, উঠাবসা, বেশাভূশায় ইসলামী সভ্যতার উদয় ঘটানো উলামাদেরই দায়িত্ব । উলামায়ে কেরাম যুগ যুগ ধরে এ দায়িত্ব পালনে ব্রতী আছেন বিভিন্নভাবে । কেউ কলমের ভাষায়, কেউ মুখের কথায়, আর কেউ আলোচনা সভায় ।
ইসলামের দাওয়াত-তারবিয়াত, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, চিন্তা-চেতনা, সভ্যতা ও দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, গুরুত্ব-মহত্ব, সেই কাফেলার পূত পবিত্র হাত ধরেই পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছবে কেয়ামত পর্যন্ত ।
আমাদের বরাক উপত্যকায়ও ইসলাম আছে । আছেন লক্ষ লক্ষ মুসলমান । হাজার হাজার উলামায়ে কেরামের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় এখানে । এখানকার মুসলমানদেরকে ইসলামের প্রকৃত চিন্তা-দর্শন, কৃষ্টি -কালচার, ইতিহাস-ঐতিহ্য, মূল্যবোধ ও শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে জ্ঞাত করে আদর্শ মুসলমান হিসেবে গড়ে তোলা উলামায়ে কেরামের একান্ত দায়িত্ব । এ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট আছেন একদল উলামায়ে রাব্বানি । যাদের আছে ইখলাস ও নিষ্ঠা । যাদের আছে ইলম ও আমল। যাদের আছে তাকওয়া ও পরহেজগারী। যাদের আছে দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতা। যাদের আছে উম্মাহের দরদ ও জ্বলন। যাদের আছে চিন্তা-চেতনা। যাদের আছে বেগ- আবেগ। যাদের আছে ত্যাগ-তিতিক্ষা । যাদের আছে মহাব্বত ও কুওয়াত। যাদের হৃদয় হিংসামুক্ত। যাদের আকিদায় নেই শিরকের কায়া, বিদায়াতের ছায়া। তাঁরা দ্বীন ও মিল্লাতের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন দিন-রজনী ।
বরাকে ইসলাম প্রচার চলছে নানা তরিকায় । যার অন্যতম মাধ্যম ওয়াজ মাহফিল । শুকনো মওসুমে এ অঞ্চলে ওয়াজ মাহফিলের হিড়িক পড়ে যায় । উপত্যকার কোনও এলাকা বাদ যায় বলে মনে হয় না । কান পাতলেই শোনা যায় ওয়াজের আওয়াজ ।
প্রচলিত ওয়াজ মাহফিল উম্মাহর জন্য কতটা সুফল বয়ে আনে? জাতিকে আলোর পথ কতটা দেখায়? কতটা ভাবায় ? কৌমের হৃদয় কি আলোড়িত হয়? হয় আন্দোলিত? কতখানি প্রভাবিত হয়? উম্মাহ কী কুশিক্ষা আর কুসংস্কার থেকে মুক্তি পায়? সবুজ পথের দিশা পায়? সর্বোপরি জাতির উপর কতটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে? এটা কিন্তু ভাবনার বিষয় । চিন্তার বিষয়,গভীর চিন্তার বিষয় । অপর দিকে ওয়াজ মাহফিলের কী কী নেতিবাচক দিক রয়েছে । নেতিবাচক প্রভাবে কৌম কতটা প্রভাবিত হয়, তাও আলোচনা করা সময়ের দাবি।
শুকনো মরসুম আসে আবার চলে যায়। শীত-বসন্ত আসে আবার চলে যায়। ওয়াজ মহফিলও যথারীতি আয়োজিত হয় । কিন্তু জাতি এতে পায় কি ? আর দেয় কী? জাতি যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরে থেকেই যায়। সমাজে পরিলক্ষিত হয় না কোনো পরিবর্তন । এ আবার কেমন দৃশ্য! ফোঁটা ফোঁটা জল শক্ত পাথরে নিক্ষিপ্ত হতে থাকলেও তো একসময় গর্ত তৈরি হয় । জাতির হৃদয় কি পাথরের চেয়েও শক্ত? উলামায়ে কেরাম কি জলফোঁটা থেকে কমজুর? না, না মোটেও না, তেমনটা ভাবার অবকাশ ও নেই । তাহলে? এ জাতি কী উলামায়ে কেরামের কথা কানে তুলে না । তাঁরা কী পরিবর্তন বিরোধী, উন্নয়ন বিরোধী, ইসলামী আদর্শ বিরোধী । না, না । তাহলে নেই কেন পরিবর্তন? কী তার রহস্য? আসুন একটু খোঁজে নিই।
একঃ ওয়াইজ সাহেবের নিষ্ঠার অভাব । ওয়াইজ সাহেব আসেন সমাজকে দিশা দেখাতে নয়, নাম ফাটাতে । কৌমকে জাগ্রত করতে নয়, টাকা কামাতে । জাতির সামনে ইসলামের শিশির-শুভ্র আদর্শ উপস্থাপন করতে নয়, সুর বাজাতে । আল্লাহ বিমুখ বনিআদমকে আল্লাহর ভয় দেখানোর জন্য নয়, বাজার ধরতে । দুনিয়ামুখী মুসলমানদের আখিরাতমুখী করতে নয়,খ্যাত-বিখ্যাত হতে । তাঁদের অন্তরে নেই কৌমের কোন করুণা । নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা । না করেন তথ্য ভিত্তিক আলোচনা । তবে ব্যতিক্রমও চোখে পড়ে । এমন আলোচনায় শ্রুতাদের মন হয় না আলোড়িত । হৃদয় হয় না অশ্রু বিগলিত । নবীপ্রেমে মন-মানস হয় না প্লাবিত ।
দুইঃ আয়োজকবৃন্দের ইখলাস শূন্যতা । মাহফিল আয়োজকদের আখের গোছানোর চিন্তা থাকে । থাকে না দিশাহারা উম্মাহর ইসলাহের ভাবনা । চাঁদা আদায় আর প্রতিষ্ঠানের গৌরবগাঁথা প্রচারই তাদের হয়ে উঠে মূল লক্ষ্য।
তিনঃ আয়োজকবৃন্দের উদাসীনতা । বিষয় ভিত্তিক বক্তব্যের ব্যাপারে তারা নিরুৎসাহী। আর উলামায়ে কেরাম কিসসা কাহিনী আর হাস্যরস সম্পন্ন আলোচনা করেন মুগ্ধতা ছড়ানো কন্ঠে। আকর্ষণীয় অঙ্গ ভঙ্গিমায়। তবে সব নয়। তাঁদের বয়ানে সঙ্কটঘেরা জাতির উত্তরোণের কোন দিশা থাকে না। কুরআন ও সুন্নাহর নিগূঢ় রহস্য উদঘাটিত হয় না। জাতি পায় না কোন তৃপ্তি ও পরিতৃপ্তি। সিরাতের সুনির্দিষ্ট আলোচনায় নবীপ্রেমের সাগরে ঢেউ উঠে না।
তিনঃ অচেতন শ্রুতাবৃন্দ। সিংহ ভাগ শ্রুতা অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত। তারা অনেকটা নির্বোধ। ওয়াজ মাহফিলে কী শুনলেও, কী লিখলেন? এ নিয়ে নেই কোন মাথা ব্যাথা। শুধু আকর্ষণীয় সুর হলেই হল।
চারঃ ওয়াইজগণ কুরআন সুন্নাহকে পিছনে ফেলে নিজেদের সংগঠন ও পীরতন্ত্রের গৌরবগাঁথা তুলে ধরতে উদগ্রীব। নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে অন্য মতাদর্শীদের প্রতি শাণিত আক্রমণ। প্রকাশ্যে শর বর্ষণ। কল্পনাতীত বিষেদগার । বর্ণনাতীত মিথ্যাচার করে থাকেন নির্দ্ধিধায়। তখন ভক্তদের স্লোগানে গগন-পবন মুখরিত হয়ে ওঠে। এতে ভক্তবৃন্দের মন ঘৃণা-বিদ্বেষে ভরে উঠে। জাতির দুর্গতি ঘোচে না; জন্ম নেয় দুর্মতি।রহমাতের অমীয়ধারার সয়লাভ বয়ে যায় না। তাছাড়া বাড়তি হিসেবে ভীন ধর্মীদের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
পাঁচঃ আর্থিক অপচয়। লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে আয়োজিত হয় একেকটি মাহফিল। অথচ ফলাফল বলতে গেলে নিটশূন্য। আয়োজকবৃন্দ যোগ্য আলোচক নির্বাচনে সংগঠনের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে যায়। সংগঠনের খাতিরে অপেক্ষাকৃত অযোগ্যকে বেছে নেয়। ফলে আশানুরূপ ফল পরিলক্ষিত হয় না।
উত্তরণের উপায়
একঃ সূযোগ্য উলামায়ে কেরামকে দাওয়াত করা হবে। এক্ষেত্রে থাকবে না সংগঠন বা পীরতন্ত্রের কোনও বেড়াজাল।
দুইঃ আয়োজকবৃন্দ সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত করা। অতঃপর ওয়াইজ সাহেবানদের সাথে আলোচনা করে নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে আগে অবগত করা।
তিনঃ পরীক্ষার মরসুমে যথাসম্ভব ওয়াজ মাহফিল মাহফিল আয়োজন না করা। এতে জাতির ভবিষ্যৎ পড়ুয়াদের বিরাট ক্ষতি সাধিত হয়।(ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা চলাকালীন ওয়াজ মাহফিলের জন্য বড্ড সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলাম)।
চারঃ ওয়াইজ সাহেবকে নির্ধারিত বিষয় সম্পৃক্ত কিতাবাদি ঘাঁটাঘাঁটি করে তথ্য ও তত্ত্ব সমৃদ্ধ আলোচনা করার চেষ্টা করা
পাঁচঃ বক্তব্য সমাপনের পর ছোট্ট প্রশ্নোত্তর পর্বের আয়োজন করা। এতে কারো প্রশ্ন বা দ্বিধা থাকলে তা সহজে বিদূরিত হবে।
ছয়ঃ এলাকার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ,রাজনীতিবিদ, সমাজসেবী ভিন্নধর্মীদের যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে মাহফিলে আমন্ত্রণ করা। এতে দুটি ফায়দা নিহিত রয়েছে। প্রথমতঃ ইসলামের দাওয়াত ও তাবলীগ। দ্বিতীয়তঃ ইসলাম সম্পর্কে ভুল বোঝাবুঝির অবসান।
সাতঃ মাহফিলের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা অপচয় না করে মুসলমানদের শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যয় করা। এতে এক আশ্চর্য বিপ্লব দেখা দেবে। জাতি শিক্ষিত হবে। সচেতন হবে। উন্নতির শিখরে আরোহণ করবে। ধীরে ধীরে কৌমের আর্থ-সামাজিক সহ সার্বিক উন্নয়ন আসবে। সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।
আটঃ মসজিদে মসজিদে জুমার দিনে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করা। এটা হবে স্থায়ী দাওয়াত ও নসিহত। ফলাফল হবে যার সুদূর প্রসারী।
নয়ঃ গ্রামে গ্রামে জিকিরের হালকা গড়ে তুলা। এতে মানুষের আত্মিক ও চারিত্রিক উন্নতি হবে। আল্লাহ এর নৈকট্য লাভ হবে। সৎগুণ জন্মাবে। কুপ্রবৃত্তি বিদূরিত হবে। কল্যাণ ও পবিত্রতা এবং পূণ্য ও সততার নূরে নূরান্বিত হবে সমাজ।
দশঃ এলাকা ভিত্তিক সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক তাফসির মাহফিল আয়োজন করা । কোনো খরচ ছাড়াই কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক আলোচনা হবে এটা । স্থায়ীত্বও থাকবে ।
এগারোঃ মসজিদে মসজিদে ছোট ছোট লাইব্রেরী গড়ে তোলা । এতে মানুষ বিভিন্ন পত্রিকা ও বই পুস্তক পাঠ করে সঠিক পথের দিশা পাবে। সমাজে সচেতনতা বাড়বে ।
বারোঃ খানকা প্রতিষ্ঠা করা ।এতে নির্দিষ্ট তরিকায় জিকির আজকারের প্রশিক্ষণ লাভ করে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে ধন্য হবে। ধূলার ধরণীতে অবস্থান করে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
Subscribe to:
Comments (Atom)