ভারতের স্বাধীনতা দিবস পালিত হয় পনেরোই আগস্ট তারিখে। ১৯৪৭ সালে এই তারিখেই ভারত ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছিল। দিনটি ভারতে একটি জাতীয় ছুটির দিন। সারা দেশে স্থানীয় প্রশাসন স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। দেশের প্রধান অনুষ্ঠানটি হয় দিল্লির লালকেল্লায়। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী পতাকা উত্তোলন করে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। সেই সঙ্গে তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নেতা ও শহিদদেরও শ্রদ্ধা জানান।
পটভূমি
১৯৪৬ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে ব্রিটেনের রাজকোষ শূন্য হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় ব্রিটেনের পক্ষে অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক কোনও রকম সাহায্য লাভ অসম্ভব হয়ে পড়ে। ব্রিটেনের লেবার সরকার বুঝতে পারে সেই পরিস্থিতিতে ভারতে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে সামাল দেওয়ার ক্ষমতা বা অর্থবল ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী হারিয়ে ফেলেছে। তাঁরা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪৭ সালের গোড়ার দিকে ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা করে দেয় যে, ১৯৪৮ সালের জুন মাসের মধ্যে ভারতের শাসনক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।
স্বাধীনতা ঘোষণার সময় যত এগিয়ে আসতে থাকে, পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশের হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তত বৃদ্ধি পায়। দাঙ্গা রোধে ব্রিটিশ বাহিনীর অক্ষমতার কথা মাথায় রেখে ভারতের তদানীন্তন ভাইসরয় লুইস মাউন্টব্যাটেন ক্ষমতা হস্তান্তরের দিনটি সাত মাস এগিয়ে আনেন। ১৯৪৭ সালের জুন মাসে জওহরলাল নেহরু, আবুল কালাম আজাদ, মহম্মদ আলি জিন্নাহ, ভীমরাও রামজি আম্বেডকর প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভাগের প্রস্তাব মেনে নেন। হিন্দু ও শিখ সংখ্যাগুরু অঞ্চলগুলি ভারতে ও মুসলমান সংখ্যাগুরু অঞ্চলগুলি নবগঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তানে যুক্ত হয়; পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশ দ্বিখণ্ডিত হয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ হয় ছিন্নমূল। তাঁরা দলে দলে র্যাডক্লিফ লাইন পেরিয়ে নিজেদের পছন্দমতো দেশে আশ্রয় নেন। বেশির ভাগ মানুষই চোখের জলে নিজেদের দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। পঞ্জাবে শিখ অঞ্চলগুলি দ্বিখণ্ডিত হওয়ায় রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা হয়। দাঙ্গা হয় বাংলা ও বিহারেও। তবে সেখানে মহাত্মা গান্ধীর উপস্থিতি দাঙ্গার প্রকোপ কিছুটা প্রশমিত করতে সক্ষম হয়েছিল। তা সত্ত্বেও ২৫০,০০০ থেকে ৫০০,০০০ লোক সীমান্তের দুই পারের দাঙ্গায় হতাহত হয়। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট নতুন পাকিস্তান জন্ম নেয়। করাচিতে মহম্মদ আলি জিন্নাহ এই রাষ্ট্রের প্রথম গভর্নর-জেনারেল হিসেবে শপথ নেন। মধ্যরাতে অর্থাৎ, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট সূচিত হলে জওহরলাল নেহরু তাঁর বিখ্যাত ‘নিয়তির সঙ্গে অভিসার’ ভাষণটি প্রদানের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ভারতীয় ইউনিয়নের জন্ম হয়। নতুন দিল্লিতে নেহরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী রূপে কার্যভার গ্রহণ করেন। মাউন্টব্যাটেন হন স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর-জেনারেল।
উদযাপন
১৫ আগস্ট দিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। অনুষ্ঠানটি জাতীয় চ্যানেল দূরদর্শনের সাহায্যে সারা দেশে সম্প্রচারিত হয়। রাজ্য রাজধানীগুলিতেও পতাকা উত্তোলন সহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। অন্যান্য শহরে রাজনৈতিক নেতৃবর্গ নিজ নিজ কেন্দ্রে পতাকা উত্তোলন করেন। নানা বেসরকারি সংস্থাও পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। স্কুল-কলেজেও পতাকা উত্তোলন ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এই উপলক্ষে বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সাজপোশাক পরে শোভাযাত্রা করে।
No comments:
Post a Comment