উম্মতে মুসলিমা কুরআনুল কারীমকে পিছে ঠেলে দিয়েছে। কুরআনুল কারীম ছেড়ে দিয়েছে। কুরআন কারীম তার ছেড়ে দিয়েছে মানে- (ক) তার তিলাওয়াত ছেড়ে দিয়েছে- যেভাবে তিলাওয়াত করা উচিত ছিল। (খ) এর অর্থ বোঝার চেষ্টা ছেড়ে দিয়েছে এবং (গ) এতে যেই তালীম ও শিক্ষা রয়েছে তার উপর আমল করা ছেড়ে দিয়েছে। কুরআন ছেড়ে দেওয়ার মাঝে এই তিন অর্থ নিহিত রয়েছে।
কুরআনে কারীমের তিলাওয়াত একটি স্বতন্ত্র আমল
কুরআনুল কারীমের হুকূক আদায়ের সর্বপ্রথম সিঁড়ি হচ্ছে কুরআনে কারীমের তিলাওয়াত। অর্থাৎ মুসলমান এর তিলাওয়াত করবে। যদিও কুরআনুল কারীম অবতরণের মূল উদ্দেশ্য হল- কুরআনুল কারীমের মাঝে যে তালীমাত রয়েছে সেগুলো আমলে নিয়ে আসা। কিন্তু এর প্রথম ধাপ হচ্ছে তিলাওয়াত। তিলাওয়াতে কুরআন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এমন মহান এক নুসখা যে, কুরআনে কারীমের শুধু তিলাওয়াতটিই একটি স্বতন্ত্র ইবাদত এবং বড় সৌভাগ্যের বিষয়। হাদীসে বলা হয়েছে- কুরআন কারীম তিলাওয়াত করলে প্রতিটি অক্ষরে দশ দশ করে নেকী পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ব্যাখ্যা করে বলেন, আমি একথা বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি স্বতন্ত্র হরফ এবং লাম একটি স্বতন্ত্র হরফ এবং মীম একটি স্বতন্ত্র হরফ- তো শুধু আলিফ-লাম-মীম তিলাওয়াত করার মাধ্যমে ত্রিশ নেকী অর্জিত হয়ে যায়।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এমন নুসখায়ে শেফা- যা মূলত হেদায়েতের নুসখা- দান করেছেন, যার কোনো তুলনা হয় না। ডাক্তারের নুসখা তো এমন হয় যে, ডাক্তার বলে দেন- এটা হল তোমার ব্যবস্থাপত্র। এ অনুযায়ী তুমি ওষুধ সংগ্রহ করে ব্যবহার করবে। কিন্তু এখন যদি তুমি সেই প্রেসক্রিপশন সারা দিন পড়তে থাক, তাহলে এতে কোনো ফায়দা নেই। তোমার রোগ এতটুকুও ভালো হবে না। কিন্তু এই নুসখায়ে শেফা এতটাই মুফীদ ও উপকারী যে, এর উপর আমল করা এবং এর অর্থ-মর্ম অনুধাবন করা যদিও একেকটি স্বতন্ত্র আমল এবং বড় বড় আমল। তবে এগুলোর সাথে সাথে শুধু এর তিলাওয়াতটাই একটি স্বতন্ত্র আমল।
এজন্য মুসলিম সমাজের একটা ঐতিহ্য এও ছিল যে, দৈনিক কিছু না কিছু তিলাওয়াত করা ব্যতীত পুরোটা দিন কাটিয়ে দিবে- এমন মুসলমান পাওয়া যেত না। সাধারণত ফজরের পর মুসলিম ঘরগুলো থেকে তিলাওয়াতের ধ্বনি ভেসে আসত। মুসলিম সমাজের এটা একটা বড় ইমতিয়ায ও বৈশিষ্ট্য ছিল। মুসলিম বসতিতে গেলে মানুষ বুঝে ফেলত যে, এটা মুসলিম জনপদ এবং এখানকার ঘরগুলো তিলাওয়াতে কুরআনে মুখরিত হয়ে আছে।
তো হযরত রাহ. বলেন- মুসলমান এই আমল ছেড়ে দিয়েছে। দৈনিক কিছু হলেও তিলাওয়াত করার যে রুটিন মুসলিম জীবনে ছিল, অনেকেই বরং বলা যায় অধিকাংশ মুসলিমই তা ছেড়ে দিয়েছে।
তিলাওয়াত ছেড়ে দেওয়ার একটা বড় কারণ এও যে, অনেক মুসলমান তিলাওয়াতটাই শিখেনি। বড় বড় পদ ও পদবীর অধিকারী হয়ে গেছে। বড় লিডার বনে গেছে। আমীর হয়ে গেছে। সমাজের মান্যগণ্য ব্যক্তি হয়ে গেছে। এতকিছু হয়ে গেছে, কিন্তু মুসলমান কুরআন শরীফ স্বাভাবিকভাবে পড়তে শেখেনি। তাহলে তিলাওয়াত করবে কীভাবে?! বহুত আফসোসের কথা!!
একটি ভুল ধারণা
সমাজে একটি মারাত্মক ভুল ধারণা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়- ভাই, কুরআন তো এজন্য এসেছে যে, তুমি এটা বুঝবে এবং এর উপর আমল করবে। শুধু তিলাওয়াতে কী ফায়দা? এটা মস্ত বড় ভুল ধারণা।
আমি তো মাত্রই রাসুলুল্লাহ সা. এর হাদীস শোনালাম- কুরআন তিলাওয়াত করলে প্রতিটি হরফে দশটি করে নেকী হাসিল হয়। আর যে ব্যক্তি তিলাওয়াতই জানে না, তিলাওয়াত করার অভ্যাসই যার নেই, সে এর উপর কী আমল করবে! কুরআনের কাছে আসার প্রথম ধাপই তো হল তিলাওয়াতে কুরআন।
তো হযরত শাইখুল হিন্দ রাহ. -আল্লাহ তাআলা তাঁর মরতবা বুলন্দ করুন- বলেছেন, এই কুরআনকে ছেড়ে দেওয়া- অর্থাৎ ক. তিলাওয়াত ছেড়ে দেওয়া, খ. এর অর্থ ও মর্ম অনুধাবন করা ছেড়ে দেওয়া এবং গ. এর শিক্ষা অনুসারে আমল ছেড়ে দেওয়া- এগুলো মুসলমানদের অধঃপতনের একটা মৌলিক কারণ।
হযরত বলেন- এজন্য আমি আমার বাকি জীবন এই কুরআনের খেদমতেই ব্যয় করব, ইনশাআল্লাহ। অর্থাৎ কুরআনে কারীমের তালীম আম ও ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর করব। এ কল্পে হযরত পুরো হিন্দুস্তান জুড়ে মক্তব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। অনেক মক্তব প্রতিষ্ঠাও করেন, যাতে সবাই দ্বীন শিখতে পারে ✍🏽