Monday, August 17, 2020

*বর্তমান* *মুসলিমদের* *অধঃপতনের*মূল*কারণ*🥏🥏🥏🥏🥏🥏জাষ্টিস আল্লামা তাক্বী উসমানী দাঃ বাঃ★★★★★★”★★★★


  উম্মতে মুসলিমা কুরআনুল কারীমকে পিছে ঠেলে দিয়েছে। কুরআনুল কারীম ছেড়ে দিয়েছে। কুরআন কারীম তার ছেড়ে দিয়েছে মানে- (ক) তার তিলাওয়াত ছেড়ে দিয়েছে- যেভাবে তিলাওয়াত করা উচিত ছিল। (খ) এর অর্থ বোঝার চেষ্টা ছেড়ে দিয়েছে এবং (গ) এতে যেই তালীম ও শিক্ষা রয়েছে তার উপর আমল করা ছেড়ে দিয়েছে। কুরআন ছেড়ে দেওয়ার মাঝে এই তিন অর্থ নিহিত রয়েছে।

কুরআনে কারীমের তিলাওয়াত একটি স্বতন্ত্র আমল
কুরআনুল কারীমের হুকূক আদায়ের সর্বপ্রথম সিঁড়ি হচ্ছে কুরআনে কারীমের তিলাওয়াত। অর্থাৎ মুসলমান এর তিলাওয়াত করবে। যদিও কুরআনুল কারীম অবতরণের মূল উদ্দেশ্য হল- কুরআনুল কারীমের মাঝে যে তালীমাত রয়েছে সেগুলো আমলে নিয়ে আসা। কিন্তু এর প্রথম ধাপ হচ্ছে তিলাওয়াত। তিলাওয়াতে কুরআন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এমন মহান এক নুসখা যে, কুরআনে কারীমের শুধু তিলাওয়াতটিই একটি স্বতন্ত্র ইবাদত এবং বড় সৌভাগ্যের বিষয়। হাদীসে বলা হয়েছে- কুরআন কারীম তিলাওয়াত করলে প্রতিটি অক্ষরে দশ দশ করে নেকী পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ব্যাখ্যা করে বলেন, আমি একথা বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি স্বতন্ত্র হরফ এবং লাম একটি স্বতন্ত্র হরফ এবং মীম একটি স্বতন্ত্র হরফ- তো শুধু আলিফ-লাম-মীম তিলাওয়াত করার মাধ্যমে ত্রিশ নেকী অর্জিত হয়ে যায়।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এমন নুসখায়ে শেফা- যা মূলত হেদায়েতের নুসখা- দান করেছেন, যার কোনো তুলনা হয় না। ডাক্তারের নুসখা তো এমন হয় যে, ডাক্তার বলে দেন- এটা হল তোমার ব্যবস্থাপত্র। এ অনুযায়ী তুমি ওষুধ সংগ্রহ করে ব্যবহার করবে। কিন্তু এখন যদি তুমি সেই প্রেসক্রিপশন সারা দিন পড়তে থাক, তাহলে এতে কোনো ফায়দা নেই। তোমার রোগ এতটুকুও ভালো হবে না। কিন্তু এই নুসখায়ে শেফা এতটাই মুফীদ ও উপকারী যে, এর উপর আমল করা এবং এর অর্থ-মর্ম অনুধাবন করা যদিও একেকটি স্বতন্ত্র আমল এবং বড় বড় আমল। তবে এগুলোর সাথে সাথে শুধু এর তিলাওয়াতটাই একটি স্বতন্ত্র আমল।

এজন্য মুসলিম সমাজের একটা ঐতিহ্য এও ছিল যে, দৈনিক কিছু না কিছু তিলাওয়াত করা ব্যতীত পুরোটা দিন কাটিয়ে দিবে- এমন মুসলমান পাওয়া যেত না। সাধারণত ফজরের পর মুসলিম ঘরগুলো থেকে তিলাওয়াতের ধ্বনি ভেসে আসত। মুসলিম সমাজের এটা একটা বড় ইমতিয়ায ও বৈশিষ্ট্য ছিল। মুসলিম বসতিতে গেলে মানুষ বুঝে ফেলত যে, এটা মুসলিম জনপদ এবং এখানকার ঘরগুলো তিলাওয়াতে কুরআনে মুখরিত হয়ে আছে।

তো হযরত রাহ. বলেন- মুসলমান এই আমল ছেড়ে দিয়েছে।  দৈনিক কিছু হলেও তিলাওয়াত করার যে রুটিন মুসলিম জীবনে ছিল, অনেকেই বরং বলা যায় অধিকাংশ মুসলিমই তা ছেড়ে দিয়েছে।

তিলাওয়াত ছেড়ে দেওয়ার একটা বড় কারণ এও যে, অনেক মুসলমান তিলাওয়াতটাই শিখেনি। বড় বড় পদ ও পদবীর অধিকারী হয়ে গেছে। বড় লিডার বনে গেছে। আমীর হয়ে গেছে। সমাজের মান্যগণ্য ব্যক্তি হয়ে গেছে। এতকিছু হয়ে গেছে, কিন্তু মুসলমান কুরআন শরীফ স্বাভাবিকভাবে পড়তে শেখেনি। তাহলে তিলাওয়াত করবে কীভাবে?! বহুত আফসোসের কথা!!

একটি ভুল ধারণা
সমাজে একটি মারাত্মক ভুল ধারণা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়- ভাই, কুরআন তো এজন্য এসেছে যে, তুমি এটা বুঝবে এবং এর উপর আমল করবে। শুধু তিলাওয়াতে কী ফায়দা? এটা মস্ত বড় ভুল ধারণা।

আমি তো মাত্রই রাসুলুল্লাহ সা. এর হাদীস শোনালাম- কুরআন তিলাওয়াত করলে প্রতিটি হরফে দশটি করে নেকী হাসিল হয়। আর যে ব্যক্তি তিলাওয়াতই জানে না, তিলাওয়াত করার অভ্যাসই যার নেই, সে এর উপর কী আমল করবে! কুরআনের কাছে আসার প্রথম ধাপই তো হল তিলাওয়াতে কুরআন।

তো হযরত শাইখুল হিন্দ রাহ. -আল্লাহ তাআলা তাঁর মরতবা বুলন্দ করুন- বলেছেন, এই কুরআনকে ছেড়ে দেওয়া- অর্থাৎ ক. তিলাওয়াত ছেড়ে দেওয়া, খ. এর অর্থ ও মর্ম অনুধাবন করা ছেড়ে দেওয়া এবং গ. এর শিক্ষা অনুসারে আমল ছেড়ে দেওয়া- এগুলো মুসলমানদের অধঃপতনের একটা মৌলিক কারণ।

হযরত বলেন- এজন্য আমি আমার বাকি জীবন এই কুরআনের খেদমতেই ব্যয় করব, ইনশাআল্লাহ। অর্থাৎ কুরআনে কারীমের তালীম আম ও ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর করব। এ কল্পে হযরত পুরো হিন্দুস্তান জুড়ে মক্তব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। অনেক মক্তব প্রতিষ্ঠাও করেন, যাতে সবাই দ্বীন শিখতে পারে ✍🏽

Thursday, August 13, 2020

১৫ ই আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস



ভারতের স্বাধীনতা দিবস পালিত হয় পনেরোই আগস্ট তারিখে। ১৯৪৭ সালে এই তারিখেই ভারত ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছিল। দিনটি ভারতে একটি জাতীয় ছুটির দিন। সারা দেশে স্থানীয় প্রশাসন স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। দেশের প্রধান অনুষ্ঠানটি হয় দিল্লির লালকেল্লায়। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী পতাকা উত্তোলন করে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। সেই সঙ্গে তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নেতা ও শহিদদেরও শ্রদ্ধা জানান।

পটভূমি

১৯৪৬ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে ব্রিটেনের রাজকোষ শূন্য হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় ব্রিটেনের পক্ষে অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক কোনও রকম সাহায্য লাভ অসম্ভব হয়ে পড়ে। ব্রিটেনের লেবার সরকার বুঝতে পারে সেই পরিস্থিতিতে ভারতে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে সামাল দেওয়ার ক্ষমতা বা অর্থবল ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী হারিয়ে ফেলেছে। তাঁরা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪৭ সালের গোড়ার দিকে ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা করে দেয় যে, ১৯৪৮ সালের জুন মাসের মধ্যে ভারতের শাসনক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।

স্বাধীনতা ঘোষণার সময় যত এগিয়ে আসতে থাকে, পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশের হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তত বৃদ্ধি পায়। দাঙ্গা রোধে ব্রিটিশ বাহিনীর অক্ষমতার কথা মাথায় রেখে ভারতের তদানীন্তন ভাইসরয় লুইস মাউন্টব্যাটেন ক্ষমতা হস্তান্তরের দিনটি সাত মাস এগিয়ে আনেন। ১৯৪৭ সালের জুন মাসে জওহরলাল নেহরু, আবুল কালাম আজাদ, মহম্মদ আলি জিন্নাহ, ভীমরাও রামজি আম্বেডকর প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভাগের প্রস্তাব মেনে নেন। হিন্দু ও শিখ সংখ্যাগুরু অঞ্চলগুলি ভারতে ও মুসলমান সংখ্যাগুরু অঞ্চলগুলি নবগঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তানে যুক্ত হয়; পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশ দ্বিখণ্ডিত হয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ হয় ছিন্নমূল। তাঁরা দলে দলে র‌্যাডক্লিফ লাইন পেরিয়ে নিজেদের পছন্দমতো দেশে আশ্রয় নেন। বেশির ভাগ মানুষই চোখের জলে নিজেদের দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। পঞ্জাবে শিখ অঞ্চলগুলি দ্বিখণ্ডিত হওয়ায় রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা হয়। দাঙ্গা হয় বাংলা ও বিহারেও। তবে সেখানে মহাত্মা গান্ধীর উপস্থিতি দাঙ্গার প্রকোপ কিছুটা প্রশমিত করতে সক্ষম হয়েছিল। তা সত্ত্বেও ২৫০,০০০ থেকে ৫০০,০০০ লোক সীমান্তের দুই পারের দাঙ্গায় হতাহত হয়। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট নতুন পাকিস্তান জন্ম নেয়। করাচিতে মহম্মদ আলি জিন্নাহ এই রাষ্ট্রের প্রথম গভর্নর-জেনারেল হিসেবে শপথ নেন। মধ্যরাতে অর্থাৎ, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট সূচিত হলে জওহরলাল নেহরু তাঁর বিখ্যাত ‘নিয়তির সঙ্গে অভিসার’ ভাষণটি প্রদানের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ভারতীয় ইউনিয়নের জন্ম হয়। নতুন দিল্লিতে নেহরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী রূপে কার্যভার গ্রহণ করেন। মাউন্টব্যাটেন হন স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর-জেনারেল।

উদযাপন

১৫ আগস্ট দিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। অনুষ্ঠানটি জাতীয় চ্যানেল দূরদর্শনের সাহায্যে সারা দেশে সম্প্রচারিত হয়। রাজ্য রাজধানীগুলিতেও পতাকা উত্তোলন সহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। অন্যান্য শহরে রাজনৈতিক নেতৃবর্গ নিজ নিজ কেন্দ্রে পতাকা উত্তোলন করেন। নানা বেসরকারি সংস্থাও পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। স্কুল-কলেজেও পতাকা উত্তোলন ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এই উপলক্ষে বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সাজপোশাক পরে শোভাযাত্রা করে।