Thursday, April 13, 2023

এক নজরে মাওলানা রাবে হাসানী নদভী রহঃ

কে এই শায়খ মুহাম্মদ রাবি' হাসানী নদবী রহ. 
(জন্ম ১৯২৯- মৃত্যু ২০২৩ ইং) 

কে হবেন তিনি যিনি অর্ধ-মাসিক আরবি পত্রিকা আল-রাঈদ জুলাই ১৯৫৯ ইংরেজিতে প্রতিষ্ঠা করে এপ্রিল ২০২৪ ইং পর্যন্ত একটানা প্রায় পয়ষট্টি বছর সম্পাদনা করেন! কে লেখেননি তাঁর প্রতিষ্ঠিত এই পত্রিকায়! ইমাম হাসান আল-বান্না, সৈয়ীদ কুতুব শহীদ, আবুল হাসান আলী নদবী, ক্বারী তৈয়ীব ক্বাসিমী, জামালুদ্দীন আতিয়্য়াহ, আব্দুল হামিদ হামুদাহ, সৈয়ীদ আফিফ জাযাইরী, আব্দুল জলীল হাসান কুয়ালালামপুরী, ড. ইসহাক আহমাদ ফারহান জর্ডানী, মুহাম্মদ হাসানী রহ.গণের মত শতশত বিশ্বখ্যাত ইসলামী পন্ডিতগণ! 

কে হবেন তিনি যিনি শিষ্যত্ব অর্জনের সুযোগ পেয়েছিলেন সমকালের সেরা ইসলামী স্কলারদের! আলিফ-বা-তা-ছা তো মামা বিশ্ববরণ্য ইসলামী পন্ডিত সৈয়ীদ মাওলানা আবুল হাসান আলী নদবীর হাতেই! অতঃপর শাহ মুহাম্মদ হালিম আ'তা, মুফতি মুহাম্মদ সাঈদ, সৈয়ীদ হামিদুদ্দীন, মুহাম্মদ উয়াইস নিগরামী, মুহাম্মদ নাজিম নদবী, শায়খ আবরারুল হক হাক্কী, শায়খুল ইসলাম হুসাইন আহমাদ মাদানী, শায়খ জাকারিয়া কান্দলাবী, শায়খ আব্দুল কাদীর রায়পুরী রহ. প্রমুখ বিশ্ববরেণ্য উসতাদগণের কাছে! কে হবেন তিনি দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামা, লক্ষ্ণৌ, দারুল উলুম দেওবন্দ, মুযাহিরুল উলুম সাহারানপুর ও হিজাজে মুকাদ্দস হয় যার শিক্ষার্জন স্থল! 

কে হবেন তিনি যিনি আরবি ভাষা, সাহিত্য ও তাঁর ইতিহাস, সমালোচনা সাহিত্য, ইসলামী সাহিত্য, ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা ও তাঁর ইতিহাস, প্রাচ্য ও পশ্চিমা সংস্কৃতি , মতবাদ ও সাহিত্যের উপর বছরের পর বছর রচনা করেছেন আরবি ও উর্দু ভাষায় শতশত প্রবন্ধ, চল্লিশের অধিক বই ও হাজারো বক্তৃতা! 

কে হবেন তিনি যিনি একটানা দীর্ঘ পচাত্তর বছর; ১৯৪৯ থেকে ২০২৪ ইং, দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার মত বিশ্বমানের প্রতিষ্টানে শিক্ষকতা করার গৌরব অর্জন করেছেন! ঐ প্রতিষ্ঠানের আরবি বিভাগের প্রধান হিসাবে ১৯৫৫ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত, আরবি সাহিত্য কলেজের ডিন হিসাবে ১৯৭০ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত, প্রতিষ্ঠানের নবম মুহতামিম  (প্রিন্সিপাল/রেজিস্টার) হিসাবে ১৯৯৩ থেকে ২০০০ পর্যন্ত এবং সবশেষে ঐ প্রতিষ্ঠানের অষ্টম আচার্য হিসাবে ২০০০ ইং থেকে একটানা চব্বিশটি বছর দায়িত্ব আদায় করেছেন! 

কে হবেন তিনি যিনি ভারতীয় মুসলমানের ঐক্যবদ্ধ ছাতা অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোনাল লো বোর্ডের দীর্ঘ ২২ বছর; ২০০২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সভাপতির আসন অলংকৃত করার যোগ্যতা রাখেন!  

কে হবেন তিনি যিনি ভারত ও বহির্ভারতের আন্তর্জাতিক মানের বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্ব দেওয়ার ও প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষমতা রাখতেন। তিনি ছিলেন অল-ইন্ডিয়া ফিক্বহ একাডেমির পৃষ্ঠপোষক,  রাবেতা আদবে ইসলামী, রিয়াদ এর সহসভাপতি, মাজলিসুল ইলমী ইসলামী, লক্ষ্ণৌ এর সভাপতি, মাজলিসুস সিহাফাত ও নাশর (পাবলিকেশন্স) এর সভাপতি, উত্তর প্রদেশ দ্বীনি শিক্ষা বোর্ডের সভাপতি, দারে আরাফাত (পাবলিকেশন্স) এর সভাপতি, রাবেতা আলমে ইসলামী, মক্কা এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, দারুল মুসান্নিফিন (রাইটার্স একাডেমি) আজমগড় এর সদস্য, অক্সফোর্ড সেন্টার ফর ইসলামিক স্টাডিজ, লন্ডন এর ট্রাস্টি, পিয়ামে ইনসানিয়ত মিশনের ডিরেক্টর! 

কে হবেন তিনি যিনি ইসলামী দাওয়াত ও তাবলীগের কাজে এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া সবকটি মহাদেশের বিভিন্ন দেশে গিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদানের গৌরব অর্জন করতে পারেন!

কে হবেন তিনি যার মা আমাতুল আজিজ হন সৈয়ীদ আবুল হাসান আলী নদবী ও ড. আব্দুল আলী নদবী রহ.গণের বোন! যার নানা হন ড. আব্দুল হাই হাসানী রহ. যিনি সারা জীবন শিক্ষকতা করে কোনো বিনিময় নেননি! যার বাবা হন প্রখ্যাত আলিমে দীন সৈয়ীদ রাশিদ আহমাদ আল-হাসানী রহ! যিনি ছিলেন উত্তর প্রদেশের প্রখ্যাত শাহ ইলমুল্লাহ পরিবারের চেরাগ! যে পরিবার শতশত ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্ব এই ভারতকে উপহার দিয়েছে, যাদের ছাড়া এদেশের দীন ইসলামের খিদমাতের ইতিহাস অসম্পূর্ণ! তার ভাইদের সবাই ছিলেন আরবি ও ইসলামী সাহিত্যের পন্ডিত। যার ছোট ভাই মুহাম্মদ ওয়াযিহ রাশিদ নদবী রহ. আপন ছোট মামা আলী মিয়া নদবী রহ. এর ডাকে সাড়া দিয়ে অল-ইন্ডিয়া রেডিওর চোখ ধাঁধানো বেতনের চাকরি উপেক্ষা করে অল্পে তুষ্ট হয়ে দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামায় দীন ইসলামের খিদমাতে সারা জীবন ব্যয় করেন। যার সমবয়সী মামাতো ভাই মুহাম্মদ হাসানী রহ. বিশ্বনন্দিত আরবি পত্রিকা "আল-বা'ছ আল-ইসলামী" প্রতিষ্ঠা করে আরব বিশ্বের তাবড় তাবড় ইসলামী ব্যক্তিত্বদদের সাথে ভারতীয় মুসলিম উম্মাহের নিবিড় ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলে তাদের কাছে প্রতি মাসে ভারতীয় মুসলমানের অবস্থান তুলে ধরার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলেন! যা আজ অবধি সগৌরবে প্রকাশ হচ্ছে। তিনি ঐ পরিবারের সন্তান যে পরিবারের উর্ধ-পুরুষের একজন ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইসলামী রিফর্মার সৈয়ীদ আহমাদ রায়বেরেলবী শহিদে বালাকোট রহ. !

পরিশেষে, তার একটি অমর বাণী দিয়ে এই সংক্ষিপ্ত লেখার ইতি টানছি: "যেদিন মিডিয়ার উপর মুসলমানদের কর্তৃত্ব আসবে সেদিনটি নিঃসন্দেহে শুধু মুসলমানদের জন্যই নয়, বাকি বিশ্বের জন্য একটি ভালো দিন হবে।" মহান আল্লাহ যেন দুনিয়া আখিরাতে তাঁর দরজা আরও বুলন্দ করেন। আমীন।।